যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত অনেক দিন পর ঢাকায় মিটিং করেছে। মিটিঙের সাইজ দেখে ফেসবুকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, সরকার একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে! আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে রক্তের দরিয়া বইয়ে দিতে বিএনপি এখন জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে!
আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিই করে গেল! যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত নিষিদ্ধের মামলায় অগ্রগতি কোথায়? গত এত বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে তারা বলেই চলেছে এই করলাম বলে! এরপর আবার কৌশলগত কারনের কথা বলে নিখোঁজ! এখন যে দল দেশে নিষিদ্ধ নয় সে দলকে পুলিশ সমাবেশের অনুমতি কেন দেবেনা?
জামায়াতের সমাবেশে অংশগ্রহন নতুন কিছু নয়। এসব তাদের উপকারভোগীদের সমাবেশ। উপকার নেবার সময় মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহনের বিসমিল্লাহ জাজাকাল্লা খায়রান বলে শপথ করতে হয়। এর বাইরে তাদের সমাবেশে কর্মসূচিতে অন্য কেউ অংশ নেয় না। অন্যকোন ইসলামী দলের নেতাকর্মীরাও নয়। এদের ভোটব্যাংকও আহামরি কিছু নয় দেশে। গুনে গুনে সংখ্যা বলা যাবে। একটা সংখ্যাও অদলবদল হবেনা।
এখন গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন নির্বাচনে হাতপাখা পীরের ভোট যেটা দেখছেন আগামী নির্বাচনে সবদল অংশ নিলে কিন্তু এদের এই ভোট দেখবেননা। এখন ধানের শীষ-দাঁড়িপাল্লার ভোট নৌকায় না দিয়ে হাতপাখায় দিয়েছে। ভোটে ধানের শীষ-দাঁড়িপাল্লা দেখলে কিন্তু হাতপাখায় যাবেনা।
জামায়াতেরও সিট পেতে বিএনপির সঙ্গে থাকতে হয়। অথবা বিএনপি তাদের সঙ্গে রাখে। দেশের গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে বিএনপির সঙ্গে না থাকলে জামায়াতের তিন সিট, বিএনপির সঙ্গে থাকলে সতের-আঠার সিট! বিএনপিরও অনেক সিটে জিততে জামায়াতের ভোটচাংক লাগে।
এরজন্যে গত নির্বাচনের সময়ও বিএনপি ৩০ টা আসনে জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী দলের প্রার্থীকে ধানের শীষে রেখেছে। লাভ হয়নি। আগামীতেও হয়তো রাখবে। কারন এ ব্যাপারে লন্ডনের ওহী আসবেই। কারন লন্ডনের তিনার উপদেষ্টামন্ডলী জামায়াত পুষ্ট। ওখান থেকে পাউন্ডও আসে। নাথিং ইজ ফ্রি।
এক পত্রিকায় দেখলাম জামায়াতের সমাবেশের অনুমতি নাকি হয়েছে সমঝোতায়! এ দল নাকি নিবন্ধন ফিরে পেতে পারে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহনের শর্তে! জামায়াতকে কিছু আসন, জাতীয় পার্টিকে আরও কিছু বেশি আসন দেয়া হতে পারে সমঝোতায়! এসব কথা বলা-লেখা যত সহজ বাস্তব তত সহজ না।
জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াক আউট করে তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনার এক সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে এসে বসেছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। আওয়ামী লীগ সেই একটি ছবি সহ্য করতে পারেনি। বিএনপি যাদের সঙ্গে সংসার করতে পারে আওয়ামী লীগ একটা ছবিও হজম করতে পারেনা।
মতিউর রহমান নিজামী বা জামায়াতের কোন নেতা আর শেখ হাসিনার সভামঞ্চে বসতে পারেননি, তেমন দ্বিতীয় কোন ছবিও আর নেই। আব্দুস সামাদ আজাদের বাসার লিঁয়াজো কমিটির বৈঠকে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান আসতেন। কিন্তু কোন ছবি হয়নি।
সেভাবে তখন আওয়ামী বিরোধী ভোটব্যাংককে ভাগ করে রেখে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছিল। কিন্তু এভাবে জামায়াত তিন আসন পেয়ে আবার বিএনপির কাছে ফেরত যায়। আওয়ামী লীগ তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি।
ওই অবস্থায় আমেরিকার হাসপাতালে মারা যান ক্যান্সার আক্রান্ত শহীদ জননী। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর মতিভ্রম কাটলে নতুন ভোটার নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার-ওয়াদা করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটি।
শেখ হাসিনা সেই শপথ রক্ষা করে ইতিহাসে তাঁর জায়গা করে নিয়েছেন। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী প্রায় সবার ফাঁসি হয়ে গেছে। সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীও বাদ যায়নি। সমঝোতায় যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর ফাঁসি যাবজ্জীবন কারাবাসে রূপান্তরিত হওয়াতে ভালোভাবে নেয়নি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা।
এখন জামায়াতের সমাবেশের সাইজ দেখে যারা নাখোশ তারা নিজেদের ঐক্যের প্রশ্নে লবডঙ্গ! ক্ষমতায় না থাকলে শুধু ঐক্য নয় মহা ঐক্য-জোট নয়-মহাজোট লাগে। ক্ষমতায় চলে গেলে আর কাউকে চোখে পড়েনা। উল্টোপাশের প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতগং ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগাররা বহুধা বিভক্ত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর পর তা আরও উৎকট প্রকাশ পেয়েছে। আপনারা ফেনীর এক তালিকাভূক্ত রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে শোকবানী দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় সালাম নিয়ে কবরে গেছে এক তালিকাভূক্ত রাজাকার! ভেজাল মুক্তিযোদ্ধায় আপনারা বানী দেন, আসল মুক্তিযোদ্ধায় দেননি!
এমনকি স্বাধীনতার প্রধান নিউক্লিয়াসের জানাজায়ও এই আওয়ামী লীগের কেউ যাননি! সিরাজুল আলম খান অসুস্থ শুনে মনিরুল হক চৌধুরীকে দিয়ে তাঁর চিকিৎসার জন্যে টাকাও পাঠিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর দলটি শুধু নয় চৌদ্দদলের কোন নেতা তাঁর জানাজায়ও যায়নি। এত ভয়!
চান্সে সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছেন বিএনপি নেতারা। জেনারেল জিয়াকে যাকে জেলে পুরেছিলেন তাঁর জানাজায় এখনকার বিএনপি নেতারা গেছেন। সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নিউক্লিয়াসকে শেষ বিদায় জানায়নি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল! যুদ্ধাপরাধীদের দলের সমাবেশ দেখে এদেরতো ভয় করবেই।