শেখ হাসিনা সম্ভবত এখন বিশ্বের সবচেয়ে পরিশ্রমী রাষ্ট্রনায়ক। দীর্ঘতম সময়ের নারী সরকার প্রধান। তাঁর কথা বলার সময়কার শারীরিক ভাষা তথা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ খেয়াল করবেন। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষেরই এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ হয়। শেখ হাসিনা তেমন একজন দৃঢ়চেতা এবং আত্মবিশ্বাসী জননেত্রী।
গত এক যুগ ধরে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের রাজনীতির নিউক্লিয়াস। তাঁকে ঘিরেই দেশের রাজনীতি-অর্থনীতির সবকিছু। শেখ হাসিনা দেশে না থাকলে রাজনীতিরও চলে অলিখিত ভ্যাকেশন। তাঁর প্যারালাল কেউ এখন সরকার বা বিরোধীদলে নেই। তাঁর এ অবস্থান একদিনে তৈরি হয়নি।
মা-বাবা, সব ভাই-ভ্রাতৃবধূ স্বজন হারিয়ে তিলতিল করে সৃষ্টি হয়েছেন একজন শেখ হাসিনা। তাঁর পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যারা হত্যা করেছে তাদের দল ফ্রিডম পার্টিই আজকের বিএনপি। এরজন্যে এরা আত্মস্বীকৃত খুনি ফ্রিডম পার্টির নেতাদের জাতীয় সংসদেও নিয়ে এসেছিল!
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের জাতির পিতাকে হত্যাযজ্ঞের সেই অবিশ্বাস্য তান্ডবের সময় শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা বিদেশে তখন দৈবাৎ থাকায় প্রানে বেঁচে যান। দিনশেষে খুনিদের পরিকল্পনায় ব্যর্থতার একটা এই যে বিদেশে থাকায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করা যায়নি, এই ক্রোধ এখনও সর্বক্ষন বিএনপি নেতারা অন্তরে লালন করেন!
শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তাঁকে তাঁর পিত্রালয় ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার সড়কের বাড়িতে ঢুকতে পর্যন্ত বাধা দিয়েছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া। বঙ্গবন্ধু খুনের মিশন সম্পূর্ন করতে খালেদা জিয়া, তাঁর পুত্র তারেক রহমান ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন!
সেদিন আওয়ামী লীগের নেতারা যে অবিস্মরণীয় ও নজিরিহীন মানবঢাল সৃষ্টি করে শেখ হাসিনার জীবনরক্ষা করেছেন, এটাই কিন্তু আওয়ামী লীগ। সেই ব্যর্থতার ক্রোধ এখনও বিএনপি নেতাদের চোখেমুখে।শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
খালেদা জিয়ার মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ একেকটি দাগী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের পর দেশজুড়ে মানুষের উৎসব হয়েছে। প্রিয় প্রজন্ম বলতো কাচ্চি পার্টি! দেশের মানুষ এদের বিচারের স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু বিচার যে হবে এটা আশা করতোনা! শেখ হাসিনা এই অসম্ভবকে করে দিয়েছেন সত্য-বাস্তব।
অপর পক্ষে এই বিচারে ক্ষুদ্ধ রাজাকার লোকজনকে পরম মমতায় বিএনপি বুকে টেনে নিয়েছে। মির্জা রুহুল আমিন চখা মিয়া মুক্তিযোদ্ধা(!) পুত্র মির্জা ফখরুল মুখ ফসকে বলেছেন তাদের পাকিস্তান ভালো ছিল। পাকিস্তানতো তাদের কাছেই ভালো! কারন সেখানেই যে জিয়াউর রহমানের মা-বাবা’র কবর।
২০০১-২০০৫ যুগে হাওয়া ভবন সরকারের ফসিল বিএনপি এখন দেশে নেতৃত্বহীন। তাদের নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের পার্টনার তারেক রহমান লন্ডনে বসে স্কাইপেতে দল চালান। আগে খালেদা জিয়া যখন সারাদিন ঘুমিয়ে রাতে অফিসে আসতেন তখন বিএনপি জেগে উঠতো। এখন দলটি অপেক্ষায় থাকে কখন সক্রিয় হবে লন্ডনের স্কাইপে।
কিন্তু এখন বিএনপির মূল দূতিয়ালির নেতা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সহ কয়েক কূটনীতিককে যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় দেখা যায় এই রসদের যোগানদাতা ইউনুস সেন্টার। ডেমোক্রেটরা হোয়াইট হাউসের নেতৃত্বে ফিরে আসায় তার সেখানে ফোনালাপ, ই-মেইল চালাচালি বেড়েছে।
শেখ হাসিনা এসব জানেন বলেই মার্কিন মাতব্বরির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। এই মার্কিনিদের বিরোধিতার মুখে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে। এই মার্কিনিরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তাই তাদের টাকায় কথা বলা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এরা কেউ বঙ্গবন্ধুর হত্যার নিন্দা জানিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি।
উল্টো এরা হত্যাকারীদের স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর এভাবে সবার আগে খুনিদের সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে আমেরিকা! সেই দেশের দূতিয়ালিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র করতে হবে? এটা যাদের দরকার তারা ধর্নায় থাকবে। শেখ হাসিনা সেই মানুষ নন।
এই শেখ হাসিনা এবার বিলাতে আমেরিকায় একান্ত কিছু সময় পেয়ে বিশেষ কিছু পেপার ওয়ার্ক করে এসেছেন। এর প্রকাশ দেখা গেছে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গে পূজার ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বক্তৃতা আর সংবাদ সম্মেলনে। এই দুই প্রকাশ্যেই তিনি বলে দিয়েছেন জাতির পিতা তাঁকে মাথা নোয়াবার দীক্ষা দেন নাই।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে ঢালাও গলা না মেলানোয় বাইডেন প্রশাসন আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্ষুদ্ধ। শেখ হাসিনা এসব কেয়ার করেননা। পিতার মতই তিনি বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বার্থ সমুন্নত রেখে চলতে শিখিয়েছেন। জাতির পিতা একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন।
আর শেখ হাসিনার উপহার একটি উন্নত বাংলাদেশ। রোদেলা দুপুরে বদ্ধ পুকুরে গ্রাম্যবালার অবাধ সাঁতার। পদ্মা সেতু এর প্রথম মাইলফলক প্রমান। এরপর একটার পর একটা দৃষ্টান্ত আসতেই থাকবে। শেখ হাসিনার আমলেই দেশের মানুষ প্রথম নদীর নীচের সুড়ঙ্গপথ দিয়ে গাড়ি চালাবে। মেট্রোরেলে চড়বে।
জাতির পিতার সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনীতি আর ভালো মানুষিতে নেই। এখানে সামরিক জেনারেলরা সেজেছেন গণতন্ত্রের প্রবক্তা! মির্জা ফখরুলরা এখানে তাদেরই খাদেম-কর্মচারী। একুশ বছর যারা নানান কায়দা-ফন্দি ফিকিরে দেশ চালিয়েছেন তারা ফেরেস্তা ছিলেননা।
দেশও তখন বেহেস্ত ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সাধু সাধু দেশ চালান। দলের বাইরে গিয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদকে রাষ্ট্রপতি করেন। বিশেষ আদালতে না গিয়ে প্রচলিত আদালতে চালু করা হয় জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার।
সেই প্রথম বিনা বাক্যব্যয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কিন্তু এসব ভালোমানুষির অভিজ্ঞতা ভালো যায়নি। লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাত পোহাতে দেয়নি! সেদিনই জানান দেয় আওয়ামী লীগ যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেই মিশন বাস্তবায়নের তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত! এরপর আর আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামের বেলতলায় যাবে কোন দূঃখে!
সেই লতিফুর মিশনে বিএনপিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা হয়। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী বানান খালেদা জিয়া! শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ক্ষমতা না ছাড়তে ইয়াজ উদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বানায় বিএনপি! সেই তারেক রহমানকে ১/১১ এর সরকার এসে ফ্যানে লটকিয়েছে।
অতঃপর রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে তিনি দেশ ছাড়ার সুযোগ নেন! বাংলাদেশের পাসপোর্ট-নাগরিকত্ব সব ব্রিটিশ সরকারের হাতে সমর্পন করে তিনিই এখন বিএনপির অটো চয়েস কান্ডারি! পিতার পর মাতা, মাতার পর ছেলে, সেই রাজনৈতিক দোকানের মালিক মোক্তার! মির্জা ফখরুল-রুহুল রিজভিগং সেই দোকানের কর্মচারী।
এখন পিটার হাসদের পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ যাতে নির্বাচন করতে না পারে। নির্বাচন ঠেকাতে যা যা দরকার সব সহায়তা দেবার বিষয়ে বিএনপিকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এই প্ল্যান জানেন বলেই নিজের কাছে স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট। মার্কিন মর্জি মাফিক নির্বাচন এখানে হবেনা।
নির্বাচন হবে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে। শেখ হাসিনাকে হারানোর শক্তি এই বিএনপির নেই। এই বিএনপি পশ্চাদপদ পাকিস্তানপন্থী। যুদ্ধাপরাধী আর জাতির পিতার খুনিদের অভয়ারণ্য। যুদ্ধাপরাধী আর জাতির পিতার খুনিদের অভয়ারণ্য দল আর বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসবেনা।