ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস টাকার মানুষ। ব্যবসায়ী মানুষ। তার ব্যবসার মূলধন বাংলাদেশের গরিব মানুষ। তাদের সঙ্গে ঋন বানিজ্য তার মূল ব্যবসা। মোটকথা তার আয়ের উৎস বাংলাদেশ। সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্র ঋনের সুদের ব্যবসা, গ্রামীণ ফোনসহ নানান ব্যবসা! ব্যবসার আয় তিনি আবার বাংলাদেশে রাখেননা। শেখ হাসিনা যেটিকে ছাব্বিশ হাজার কোটি টাকার মানিলন্ডারিং বলেছেন!
এত আয় করেও স্বচ্ছতার সাথে আয়কর দিতেননা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস। বিগত সরকারের আমলে আয়কর নিয়ে মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে তিনি বেশকিছু আয়কর ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। এরমাধ্যমে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন তার অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়টি স্বচ্ছ নয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রায় সবার অর্থনৈতিক লেনদেন ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের মতো স্বচ্ছ নয়। সবাই চেষ্টায় থাকেন না দিয়ে যদি পারা যায়!
ক্ষমতায় পৌঁছে নিজের বাকি মামলাগুলো ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস প্রত্যাহার করে নিয়েছেন! উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন! আর এরাই শেখ হাসিনাকে বিচারের সম্মুখীন করতে চান! আর এরা নিজেদের বিচার এড়াতে মামলা নিজেদের প্রত্যাহার বাতিল করে নিয়েছেন! অস্বচ্ছ লোকজনের স্বচ্ছতার অভিনয় জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।
জগতের সব সম্পর্ক অর্থনৈতিক। ব্যক্তি-ব্যক্তির সম্পর্ক, পারিবারিক সামাজিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক সবই অর্থর্নৈতিক। বাংলাদেশের ছোট খামারি ডিম উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান দু’জনের লক্ষ্যই কিন্তু মুনাফা। এক্ষেত্রে ডক্টর ইউনুস বিশ্বমানের কর্পোরেট ব্যবসায়ী। তার মক্কা আমেরিকা। ডক্টর ইউনুসকে আমেরিকা তৈরি ও প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি মার্কিন প্রোডাক্ট।
আমেরিকাও কোন রামকৃষ্ণ মিশন বা সেবা সংস্থা নয়। তারা ইউনুসকে তাদের সব ধরনের পদক দিয়েছে। নোবেল পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছে। ইউনুসও তাদের বিশ্বস্ত অনুগতজন। তিনি এখন মান্যিগন্যি মানুষ। ভৃত্য পদ ব্যবহার তার ক্ষেত্রে অবমাননাকর।
কৃতজ্ঞ ইউনুসও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে বড় অনুদান দিয়েছেন। এটাও বাংলাদেশের গরিব মানুষ থেকে নেয়া সুদ ব্যবসা, ফোন ব্যবসার টাকা। বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানকে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস কোনদিন কোন চাঁদা বা ডোনেশন দিয়েছেন এমন কোন নজির নেই। কারন ইউনুস জানেন আমেরিকা বা ক্লিনটন পরিবার তাকে যা দেন বা দিতে পারেন, বাংলাদেশের জরিনা করিমনরা তা দিতে পারবেনা। কৃতজ্ঞ মার্কিনিরা এবার নিউইয়র্কে তার সম্বর্ধনার আয়োজন করেছে।
আমেরিকা দেশে দেশে ইউনুসের মতো লোকজনকে অনেকদিনে তৈরি করে। অনেকদিন ধরে তারা ইউনুসকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় নেবার চেষ্টা করছিল। এবং অনেকদিন পর তারা সফল হয়েছে। যেটা ইউনুস স্বীকার করেছেন, দীর্ঘদিনের প্রিপ্ল্যান্ড! খুশিতে জাতিসংঘ অধিবেশনে ইউনুস যাবার পর মার্কিন পক্ষে তাকে সেভাবে সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছে বা বাংলাদেশের কোন নেতাকে কোনদিন দেয়নি।
কারন ইউনুসের মতো এমন নিরেট নির্ভরযোগ্য দ্বিতীয় কাউকে আগে আমেরিকা পায়নি। বিশ্বস্ত ভৃত্য পদবী বিশেষনটি তার জন্য অপমানকর। জো বাইডেন ইউনুসের ঘাড় ধরে ছবি তুলেছেন। মাথায় চুমু খেয়েছেন। কৃতজ্ঞ ইউনুসের আনন্দে হাসির সময় তার চোখে পানি চলে এসেছে।
রংপুরের আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে তার গলা ধরে আসে! কান্না পায়! কিন্তু জো বাইডেন জডিয়ে ধরলে তার মনে হয়নি মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে গাজা'র চল্লিশ হাজার মানুষের রক্ত! মুসলমানের রক্ত! লক্ষ লক্ষ মানুষকে সেখানে চিরদিনের জন্যে পঙ্গু, অন্ধ করে দেয়া হয়েছ। ধংস করে দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িঘর সম্পদ সবকিছু। বংশ পরষ্পরায় ফিলিস্তিনি জাতিকে এরা নিশ্চিহ্ন করার মিশনে লিপ্ত।
বানিজ্যিক বুদ্ধিমান ইউনুস জানেন মুখের ওপর বাইডেন বা কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে খুনি বলা যায়না। তারাই মনিব। দাস পদবী শব্দ উচ্চারন করা এখানে ইউনুসের জন্য অপমানকর। বিল ক্লিনটন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত সহ বিশ্বে যারা যেখানে আমেরিকার অনুগত তাদের সবাই এই সুযোগে ইউনুস বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন। দালালকে সম্মাননা বললে ইউনুসের জন্যে অপমানকর মনে হবে। তিনি আমেরিকার স্বপ্ন পূরন হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউনুস। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের পুনরুজ্জীবনের অঙ্গিকার করা হয়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরব পাকিস্তানকে বলেছে তারা যাতে আর ভিক্ষুক তাদের দেশে না পাঠায়। হজ সহ নানান উসিলায় প্রতিবছর হাজার হাজার লোক সৌদি আরব গিয়ে ভিক্ষা করে। এটি পাকিস্তানিদের খাসলত। আর ইউনুস পাকিস্তান নামের ভিক্ষুক দেশের কাছে চেয়েছেন আর্থিক সহায়তা!
বাংলাদেশের কোন একজন সুশীল পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছেন পাকিস্তান একাত্তরের অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়নি। আগে পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে। দিতে হবে সম্পদের হিস্যা। আমেরিকা কী বাংলাদেশ প্রশ্নে তাদের একাত্তরের ভূমিকার জন্যে ক্ষমা চেয়েছে? আমেরিকার কারনে তার ঘনিষ্ঠ ইউরোপের সব দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য আমেরিকা সহ এর মিত্রদেশগুলোও দায়ী। বাংলাদেশের কোন দেশ সরকার কী কোনদিন একত্তরের ভূমিকার জন্য আমেরিকা ইউরোপীয় দেশগুলো, চীন, সৌদি আরবসহ মুসলিম দেশগুলোকে দূ:খ প্রকাশ ক্ষমা চাইতে বলেছে? না হাঁটু কাঁপে? না ভাসুরের নাম মুখে নিতে নেই!
একাত্তরে ভারত রাশিয়া যদি সাহায্য না করতো, জাতিসংঘে রাশিয়া যদি ভেটো প্রয়োগ না করতো তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কী? ভারতের আর্থিক অবস্থা তখন আজকের মতো ছিলোনা। সেই ভারত তখন বাংলাদেশের এককোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে খাইয়েছে পরিয়েছে। ভারতের গরিব জনগন বাসে ট্রেনে উঠলেই এমনকি সিনেমা দেখতে গেলেও শরণার্থী ট্যাক্স দিয়ে সহায়তা করেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে। আমেরিকা চীন ব্রিটেন ফ্রান্স সহ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলেই ভেটো পাওয়ার দিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া।
জন্ম থেকেই বাংলাদেশ তাই চিহ্নিত ভারত রাশিয়াপন্থী দেশ। বিশ্ব তখনও রাশিয়া আমেরিকা দুইভাগে বিভক্ত ছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে শত্রুদেশ আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। একাত্তরে বাংলাদেশের জনগনের কাছে পরাজিত আমেরিকা ফের প্রতিশোধ নিয়েছে!
সেই দেশ আমেরিকা ঠিক ঠিকই নিজের পরিকল্পনা মোতাবেক ইউনুসকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। বাংলাদেশে সারাক্ষন যারা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’র কথা বলতে মুখে ফেনা তুলেন তারা কী সিআইএ, মোসাদ এসবকে দুগ্ধপোষ্য শিশু মনে করেন? না তাদের এন্টেনায় অতটুকু আসেনা!
কৃতজ্ঞ ইউনুসও ক্ষমতা প্রাপ্তির পর প্রথম সুযোগে আমেরিকা গিয়ে বাংলাদেশের জন্মশত্রু আমেরিকার পক্ষ নিয়েছেন উলঙ্গভাবে। নি:শর্ত ভৃত্য দালাল পদবীগুলো লেখা ব্যবহার করা তার মতো মান্যিগন্যি ব্যক্তির জন্যে অপমানকর।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে আটকে দিতে পদ্মাসেতুর ঋন বাতিল করেছিল। শেখ হাসিনা এর নেপথ্যে ইউনুসের ভূমিকার অভিযোগ করায় সবাই তখন তা বিশ্বাস করতে চাননি। সেই বিশবব্যাংক আইএমএফ এবার নিজেরাই বুঝিয়ে দিলো ঘটনা সত্য। ইউনুস ক্ষমতায় আশায় খুশিতে তারা বিপুল অংকের ঋণ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে! এতদিন বলা হলো শেখ হাসিনা দেশকে ঋণে জর্জরিত করে গেছেন! এই ঋণগুলো কী শোধ করতে হবেনা? নির্বাচনের পর কী বাংলাদেশে ফেরেস্তারা ক্ষমতায় আসবেন?
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এরা কোন সেবা সংগঠন নয়। ইউনুসের মতো ঋন ব্যবসায়ী সংস্থা। আবার বলি, জগতের সব সম্পর্ক অর্থনৈতিক। সব ঋণই কিন্তু সুদে আসলে ফেরত দিতে হয়। শেখ হাসিনার সংসার বাংলাদেশকে সাহায্য নির্ভর দেশের তকমা থেকে মুক্ত করেছিল। বাংলাদেশকে আবার সাহায্য প্রত্যাশী দেশের তকমায় ফিরিয়ে নিচ্ছে ইউনুস সরকার!
দিন শেষে বাংলাদেশের মানুষের সংকট রুটি রুজির। দেশে বিপ্লব না অভ্যুত্থান হয়েছে এসব নিয়ে বিতর্কের বাহাস চলছে! ইউনুস আমেরিকা জয় যারা দেখছেন এতে করে তার সামাজিক ব্যবসা ভবিষ্যতে আরও ভালো চলবে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের রুটিরুজির সংগ্রাম কী শেষ হয়ে গেছে? না যাবে? বাজারে দ্রব্যমূল্যের কী অবস্থা? বিপন্ন মানুষ রাস্তায় নামলেই তাদের ষড়যন্ত্রকারীর তকমা দেয়া হচ্ছে। এই নিষ্ঠুরতার শেষ কিন্তু আছে।
কেউ বাঁচতে পারবেননা। ইউনুস তখন পর্যন্ত বেঁচে থাকলে তাকে আমেরিকা নিয়ে যাবে। অন্যরা কী বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত কী পৌঁছতে পারবেন? বাংলাদেশের মানুষের শান্তিতে ভাত খাবার দাবি অধিকারকে দাবায়ে রাখতে পারবেননা। আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মী সমর্থকদের দাবায়ে রাখতে পারবেন মনে করেছেন? তাদের ছাড়া আপনারা ভোট করে ফেলবেন? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের আইন পাশ করছেন? করতে থাকুন। এই প্রজন্মও বিরোধীদলের ভূমিকায় আওয়ামী লীগকে দেখেনি। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করতে চান না এসব কিসের সংস্কার? আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ড নির্বাচন, এসব শুনেতো মানসিকভাবে অসুস্থরাও হাসবে। আপনারা কী মানসিকভাবে সুস্থ আছেন?
whatsup: +61413871137