প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

বিএনপির ক্ষমতা এখনও বহদূর

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিএনপির ক্ষমতা এখনও বহদূর

আন্তর্জাতিক গনতন্ত্র দিবসে বিএনপির জনসভার বক্তব্য শুনছিলাম অনলাইনে। এরপর আবার এক সাংবাদিকের ইউটিউব চ্যানেলে শুনছিলাম তারেকের বক্তৃতার বিশ্লেষন। বিএনপির জনসভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রোশ ঝরেছে! বড় আশা ছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পরপর অতিদ্রুত দেশে ফিরেবেন তারেক রহমান! তারা ক্ষমতায় বসবেন। কিন্তু এরমাঝে দেশের চাঁদাবাজি সহ নানাকিছুর নিয়ন্ত্রন নিলেও এর যে এখনও কোন সবুজ সংকেত নেই তা বিএনপির নেতাদের বক্তৃতায় স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাচ্ছিল!

এর আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তৃতায় মনে হচ্ছিল তারা ক্ষমতার স্বাদ আরও চান আরও বেশি করে চান! চাকরির কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে ক্ষমতাসীনদের ভুলে তারা ক্ষমতায় চলে গিয়েছেন! উপদেষ্টা পরিষদে এখন তাদের তিন সদস্য আছেন। অনেকে ব্যঙ্গ করে তাদের নাম দিয়েছেন শিশু উপদেষ্টা!

আসলে ক্ষমতায় এখন শুধু তাদের তিনজনই এখন নন। এখনও তারা প্রেসার গ্রুপ হিসাবে তারা সরকারের নানাকিছু নিয়ন্ত্রন করছেন! এমনকি ডিসি কারা হবেন এটিও তারা নিয়ন্ত্রন করেছেন! যারা এখানে প্রধান উপদেষ্টা সহ উপদেষ্টা পরিষদ ঠিক করেছেন, ডিসি নিশ্চয় তাদের চেয়ে বড় নন। প্রধান উপদেষ্টাও বিএনপি সহ অন্যদের তাদের ক্ষমতার উৎস বোঝাতে মনে করিয়ে দেন, ছাত্রজনতাই তাদের ক্ষমতার উৎস।

আন্দোলনের সময় ছাত্রদের নেপথ্যের মুরব্বিদের একজন ছিলেন আসিফ নজরুল। সেনাবাহিনী মূলত এই আসিফ নজরুলের মাধ্যমে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে। ছাত্রদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের শিক্ষক আসিফ নজরুল! তিনি আবার সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি।

প্রকাশ্যে জনগন দেখেছে ছাত্ররা নতুন সরকারের প্রধান হিসাবে ডক্টর ইউনুসের নাম প্রস্তাব করেছে। আসলে তাদের দিয়ে এসব একটার পর একটি চাল দেয়ানো হচ্ছিল! নেপথ্যের কুশীলবরা তাদের সিদ্ধান্ত সমূহ ভায়া আসিফ নজরুলসহ কয়েকজনের মাধ্যমে ছাত্রদের দিয়ে বলাচ্ছিল বা পাশ করাচ্ছিল! সেনাবাহিনী প্রধানের ইচ্ছা ছিল নতুন সরকারে কারা আসবেন এটা তারা ঠিক করবেন। কিন্তু ছাত্ররা ঘোষনা দিলো এসব তারা ঠিক করে দেবে। সেনা প্রধানকে অত কষ্ট করতে হবেনা।

এভাবে আসিফ নজরুল নিজেকে সরকারে দ্বিতীয় ব্যক্তি রেখে ছাত্রদের মুখ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পাশ করান। আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের, আর স্নাইপার অস্ত্রের কথা বলে নিজের বিপদ ডেকে আনেন ব্রিগেডিয়ার(অবঃ) সাখাওয়াত হোসেন। শাস্তি হিসাবে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিলে দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি পিছিয়ে পড়ে। এ দিকটা তিনি যতটা সামাল দিতে পারতেন তা তার উত্তরসূরী পারেননি। সাখাওয়াত হোসেনও বুঝতে পারেন, ফ্যাসিবাদের কথা বলা হলেও ইউনুস সরকার নিজেই দেশের নব্য ফ্যাসিবাদ।

প্রধান বিচারপতি সহ আপিল বিভাগের বিচারকদের হুমকি দিয়ে পদত্যাগ করানো থেকে শুরু করে ছা্ত্রদের দিয়ে নেপথ্যে যতকিছু করনো হচ্ছে নেপথ্যে তাদের গুরু আসিফ নজরুল ছিলেন এবং এখনও আছেন। মাঝে মাঝে অনেকে বলার চেষ্টা করেন, আসিফ নজরুল কোথায়। তাকে কোথাও দেখা হচ্ছেনা কেনো। তিনি আসলে পিছনে থেকে কাজ করছেন।

আন্দোলন বিজয়ী ছাত্ররা এখন আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে চায়। বা তাদের সংগঠন যতদিন তৈরি হবেনা ততদিন দেশে নির্বাচন হবেনা। এরজন্যে ছাত্ররা এরমাঝে তাদের বক্তব্যে বলেছে নৌকার বিপরীতে ধান চাষের জন্যে তারা আন্দোলন করেনি। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে তা দেশের নতুন রাজনীতি নয়। ছাত্রনেতাদের একজন হাসনাত আব্দুল্লাহ কটাক্ষ করে বলেন, তারেক রহমানও এখন ছাত্রদের পক্ষে ভালো ভালো কথা বলছেন! আগামীতে তার এসব অবস্থান থাকবেন কীনা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রদের এসব বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন! সরকারি ছত্রছায়ায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে কীনা সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব। ছাত্ররাও দেশজুড়ে সফরে বেরিয়ে মাঠের পরিস্থিতি এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর অনুকূল মনে করেনি। অভিভাবকদের যে নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, সারাদেশে সে রকম কমিটি গঠনের পরিস্থিতি এখনও অনুকূল মনে করা যায়নি। এরজন্যে ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ বলেছেন, রাজনৈতিক দল গঠনের খবরটি গুজব!

আমার ধারনা ছাত্র আন্দোলনের গরম বোধ থাকতে থাকতে এখন ডাকসু সহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন করা হতে পারে। প্রচলিত রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র সংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাসের বাইরে রেখে নির্বাচন করার অবস্থা এখনও আছে। ভবিষ্যতে তা হয়তো থাকবেনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব বিজয়ী হলে পরবর্তীতে রাজনৈতিক দল গঠনের পথে তা বাড়াবেন।

কিন্তু তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেয়া বক্তব্যে বিএনপির নানা পর্যায়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। বিএনপির গনতন্ত্র দিবসের সভায় এক নেতা বলেন, তারা সতের বছর ধরে আন্দোলন করছেন। কাজে কেউ যাতে মনে না করেন যে সতের দিনের আন্দোলনে তারা একাই সবকিছু করে ফেলেছেন! বিএনপির পক্ষে আন্দোলনে নিহত তাদের নেতাকর্মীদের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। বিএনপির ক্ষোভ দেখে ছাত্রনেতারা অবশ্য তাদের গলার সুর নামান এবং নরম করেন।

সেই সমাবেশে তারেক রহমান বলেন, ইউনুস সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবেনা। ছাত্ররা যা যা বলছেন, এসব বিএনপিরও দাবি। অনেকের মতে তারেক আসলে বিভিন্নভাবে তার ব্যাপারে সরকারকে নমনীয় করতে চাইছেন। তার নামে সাজা এবং হুলিয়া আছে দেশে। এসব বিষয়ে সমঝোতা ছাড়া তার এখনও দেশে আসার সুযোগ নেই। সরকার সংস্কারে কতটা সাফল্য পায় এর উপর ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নির্ভর করবে। জামায়াতে প্রতি সেনাবাহিনীর যে দূর্বলতা আছে বিএনপির ব্যাপারে তা নেই।

এখনই নির্বাচন হলে তা বএনপির অনুকূল হবে। ছাত্রদের আন্দোলনের ক্ষমতায় যাবার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এখনও নির্বাচন দেবার চিন্তা নেই ইউনুস বা মার্কিন-ভারত পক্ষের! বাংলাদেশের আগামী নেতৃত্ব নিয়ে এরমাঝে মার্কিন-ভারত পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে।

[email protected]

+61413871137