এখন দেশের জাতীয় শব্দের নাম ষড়যন্ত্র! কোন কিছু ঘটলে দেখলেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজা হচ্ছে! মুখ নাক বাড়িয়ে ষড়যন্ত্রের উৎস খুঁজতে শুকতে শুকতে নাকে মুখে ময়লা লেগে যাচ্ছে! এরপর আবার চেখে দেখা হচ্ছে এই ময়লাটি আওয়ামী লীগের কীনা! অনেকেরই ধারনা এটি বর্তমান সরকার দলীয়দের মানসিক রোগ! এরা নিজেরাতো ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় এসেছে। তাই সারাক্ষন সবকিছুতে ষড়যন্ত্র দেখে!
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেই বিটিভি ভবন, দুর্যোগ মন্ত্রনালয়, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েলের টোল প্লাজা সহ নানা কিছু জ্বালিয়ে দেয়া হয়। নরসিংদী জেলখানায় হামলা চালিয়ে ব্যবস্থা করা হয় জঙ্গিদের সহ সব বন্দীদের পালিয়ে যাবার। বন্দী জঙ্গিদের নিয়ে যেতে আগে থেকে জেলখানার সামনে একটি মাইক্রো অপেক্ষমান ছিল। তখনও বলা হয়েছে এসব করেছে আওয়ামী লীগ! আন্দোলনকে বিপথগামী করতে আওয়ামী লীগ এসব ঘটিয়ে অন্যদের বদনাম দিয়েছে!
দেশের থানা পুলিশ কাজ করছেনা। বেশিরভাগ থানার নিজস্ব গাড়ি পর্যন্ত এখন নেই। সব পুড়িয়ে দেয়া হযেছে। পুলিশ সদস্যদের জবাই করে হত্যার ট্রমা থেকে বেরুতে পারছেননা। কোন পুলিশ সদস্যকে এখন পর্যন্ত মানসিক চিকিৎসা দেবার কথা শোনা যায়নি। শুধু বলা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের কথা! কারো কারো তসবির জপমালার নাম এখন ষড়যন্ত্র!
ইউনুস সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব:) সাখাওয়াত হোসেন মাঠে নেমে অবাক হয়ে জানতে পান আন্দোলনে নিহত আহতদের শরীরে এমন সব নিষিদ্ধ অস্ত্রের গুলি, আঘাতের ক্ষত পাওয়া গেছে যা বাংলাদেশের পুলিশ বা আইনশৃংখলা বাহিনীর কেউ ব্যবহার করেনা। এটা মিডিয়াকে বলার পরপর সাখাওয়াত সাহেবকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
ছাত্রদের আন্দোলনের ভিতরে ঢুকে জঙ্গি সংগঠনগুলো কিভাবে লাশ সংগ্রহ করছিল, পুলিশকে মেরেকুটে বেপরোয়া গুলি চালাতে বাধ্য করছিল তা বিভিন্নভাবে জানা যাচ্ছিল। ওয়াকিফহালদের ধারণা জাতিসংঘ বা কোন বাহিনী তদন্তে এসে যদি এসব বিষয়ে সতর্ক না থাকে তাহলে অনেক সত্য অনুদঘাটিত থেকে যাবে। ইউনুস সরকার যাদেরকে এসবকিছু তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে তারা নিজেরাই একটি পক্ষ। তারা নানান হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাজ করছিল।
রংপুরের আবু সাঈদ নিহত হবার আগের দিন পুলিশ পিটিয়েছে। এর ভিডিও অনলাইনে আছে। তদন্তে এসব যাতে বাদ না পড়ে। উন্নত দেশগুলো গনতন্ত্রের আন্দোলনকে সমর্থন করে। কিন্তু কোন অবস্থাতে পুলিশ বা আইনশৃংখলা রক্ষাবাহিনীর গায়ে ফুলের টোকা বা এগ্রেসিভ বিহেভিয়ার অনুমোদন করেনা।
বাংলাদেশের নির্বাচন বা যে কোন রাজনৈতিক ঘটনার পর হিন্দুদের ওপর আক্রমন হয়। কারন এন্টি আওয়ামী লীগ আক্রমনকারীরা মনে করে হিন্দু মানেই নৌকা অথবা আওয়ামী লীগ সমর্থক! আরেক পক্ষ মনে করে আক্রমন করলে ভয়ভীতি দেখালে হিন্দুরা ভারতে চলে যাবে। তাদের জমি সম্পত্তি কেনা যাবে পানির দামে। এভাবে দেশের হিন্দু জনসংখ্যা শুধুই কমছে।
এবারেও ৫ আগষ্ট থেকে দেশের নানান এলাকাতে হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু হিন্দুরা এবার অবিস্মরণীয়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে! এই প্রথম মিছিল করে বলে বলেছে এই দেশ আমার মাটি আমার মা, এই দেশ আমরা ছাড়বোনা। হিন্দুদের এই প্রতিবাদ ঘুরে দাঁড়ানো দেখে মতলববাজরা ঘাবড়ে গেছেন। ভারতে মুসলমান নির্যাতন দেখলে বাংলাদেশের মিডিয়ায় তা নিয়ে রিপোর্ট হয়। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়ায় হিন্দু নির্যাতনের রিপোর্ট দেখে বেশি ক্ষিপ্ত হয়েছেন সেইসব মিডিয়ার লোকজন! এসবকে অতিরঞ্জিত বলেছেন। হঠাৎ করে দেশের প্রায় সব টিভি চ্যানেল নওমুসলিম বিটিভি হয়ে পড়ার কারণে এবার রোগটি বেশি চোখে পড়েছে। অথচ হিন্দুদের ওপর হামলা দেশে এবারই প্রথম ঘটেনি।
বাংলাদেশের পুলিশ আনসার এরা সবাই কম বেতন পায়। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে গিয়ে তাদের অনেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আনসারদের অবস্থা তুলনামূলক বেশি নাজুক। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার পর সবার মাঝে পরিবর্তনের স্বপ্ন তৈরি হয়। মনে করা হয় দাবি দাওয়া আদায় বা উর্ধতনদের জুলুম নির্যাতন প্রতিকারের এটাই সুযোগ।
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর দেশে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল। সামরিক বাহিনীর দল নয়। রাজনৈতিকভাবেই ওই ঘটনা সামাল দেবার চেষ্টার সময়ই বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীর অনেক অফিসারকে মেরে ফেলে। অফিসারদের বিরুদ্ধে জওয়ানদের এমন বিদ্রোহের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জিয়া ক্ষমতা দখল করেন। এরপর একেরপর এক ক্যু নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর অনেক অফিসারকে হত্যা করা হয়।
কিন্তু সেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাও নাকি আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে ঘটিয়েছে! সেনানিবাসে খালেদা জিয়া যে নয় বিঘা জমির বিশাল বাড়িটি দখল করে রেখে ছিলেন সেখানে কয়েকশ ফ্লাট বানিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত অফিসারদের পরিবারগুলোকেও বিনামূল্যে ফ্লাট দেয়া হয়েছে। পরিবারগুলোকে দেয়া হয়েছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। সেই ফ্লাটগুলো থেকে এসে পরিবারগুলো এখন শেখ হাসিনার বিচার দাবির অনুষ্ঠানে যোগ দেন! শেখ হাসিনা নাকি ষড়যন্ত্র করে তাদের মেরে ফেলেছেন।
এবার চাকরির নিরাপত্তা সহ নানান দাবিতে আনসাররা আন্দোলন বিদ্রোহ করলে বলা হয় এটি ষড়যন্ত্র! বিদ্রোহ দমন করা হয় শক্তভাবে। কয়েকশ আনসার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের পরিবারগুলোর এখন কিভাবে চলছে সে খোঁজ আর কেউ নিচ্ছেননা! টকশোতে অনেক পন্ডিত ব্যক্তি বলেই যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে আনসারদের আন্দোলনে নামিয়েছে! এমন প্রমাণ কী কারো কাছে আছে? কারো জীবিকার আন্দোলন দেখলেই কেনো ষড়যন্ত্র মনে হয়?
উন্নত বিশ্বের মিডিয়ায় এক রিপোর্টার গোল আলুর মতো সব রিপোর্ট করেননা। বিষয় নির্ভর টকশোর জন্যও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের লোকজনকে ডাকা হয়। বাংলাদেশের সবাই সবকিছু জানেন বলেই সমস্যা তৈরি হয়। টকশোর বাজেটও কম। টকশোতে সবজান্তাদের কারো রেট ২ হাজার টাকা। কারও ৩ হাজার। এদের অনেকে এখন টকশো করেই সংসার চালান। আজ পর্যন্ত এদের কোন একজন কোন একটি অভুক্ত পরিবারকে খাবার কিনতে কোন একটি টকশোর আয় এই দুই হাজার টাকা দান করেছেন, এমন কোন মহানুভবের কথা শোনা যায়নি।
বাংলাদেশে সবচেয়ে কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে এখানে তৈরি পোশাক শিল্প গড়ে উঠেছে। এই শ্রমিকদের কান্নার খবর কেউ রাখেনা। মালিকদের বৈভব বাড়ে। তাদের বাড়েনা। অনেক মালিক নিয়মিত বেতন দেননা অথবা নানা কারনে বেতন দিতে পারেননা। এখন অনেক মালিক রাজনৈতিক কারনে গ্রেফতার হওয়ায় বা আত্মগোপন করায় অনেক কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না।
বেতনের দাবিতে তারা আন্দোলন করলে বলা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের কথা। বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বা ভিন্ন কোন দেশ পোশাকখাতকে অস্থিতিশীল করতে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে দিয়েছে! এই কিছুদিন আগেও আন্দোলনে পোশাক শ্রমিকদেরও ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের অনেকে হতাহতও হয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনে বিজয়ীরা এখন আন্দোলন দেখলেই এর পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন! আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা শুকতে গিয়ে তাদের নাকে মুখে লেগে যাচ্ছে নোংরা ময়লা!
আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি আওয়ামী লীগ এখনও কিছুই করছেনা। চেষ্টাও করছেনা। নেতাকর্মীদের নিরাপদে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ আর সময় পার করতে বলা হয়েছে। শেখ হাসিনার যে সব ফোনালাপ ফাঁস করা হয় এসব কল তিনি করেননা বা ফাঁসও করেননা। যিনি ফোন করেন তিনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ দেখাতে তা ফাঁস করে শেখ হাসিনাকে বিব্রত করেন। আর টকশোর পন্ডিতরা শেখ হাসিনাকে এমন স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাসী দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মনে করেন ভারত সরকারও এসব ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত! অথচ শেখ হাসিনা ভারতে আছেন দেশটির জনগন আর সর্বদলীয় অতিথির মর্যাদায়। বন্দী হিসাবে নয়। তাঁর ফোন লেপটপ সঙ্গেই আছে। জনগন চাইলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদাতা দলটি আবার ক্ষমতায় ফিরবে। এরজন্য কোন ষড়যন্ত্র করা লাগবেনা।
Whatsup: +413871317