সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বিএনপি একবার এক রকম কথা বলছে! এতে প্রকাশ পাচ্ছে দলটির অস্থির অসংলগ্ন স্বরূপ! বিএনপি ষোল বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল। কিন্তু তাদের আন্দোলন একবারও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারেনি। ছাত্রদের আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন হলে খুশি খুশি বিএনপি প্রথম সুযোগেই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করায়। কিন্তু তারেকের দেশে ফেরার কোন গতি করাতে পারেনি। ফালু অবশ্য দুবাই থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। গিয়াস উদ্দিন মামুনের মুক্তি মিলেছে। যিনি একসময় তারেকের বিশেষ পার্টনার ছিলেন।
এতদিন বিএনপি বলে আসছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বাধার কারনে তারা খালেদাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে পারছেনা। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজা মাফ করিয়ে মুক্তির ব্যবস্থা করলেও একমাসেও তারা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাবার দিনতারিখ ঠিক করতে পারেনি। এখন বলা হচ্ছে তার শরীর দীর্ঘ বিমান ভ্রমনের উপযোগী নয়। হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিকস সহ নানান রোগ খালেদার। তার লিভার বদলাতে হবে। ডোনার কে হবেন? এখনও কিছুই ঠিক হয়নি। এই বয়সে খালেদা জিয়ার লিভার বদলানো কতোটা নিরাপদ তা চিকিৎসরাই বলতে পারবেন।
তারেক রহমান দেশের আইনে একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করে তারেককে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে। তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। বিলাতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট তিনি সারেনডার করেন। ব্রিটিশ সরকার আবার তারেক সহ তার পরিবারের সবার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকারকে হস্তান্তর করেছে। দেশে আসার ব্যাপারে তারেক আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সংগে ফোনে কথা বলেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজজামান তারেকের সাবেক আইনজীবী। এসব স্বত্ত্বেও তার দেশে ফেরার গ্রীন সিগনাল পাওয়া যায়নি। বিএনপি এই ঘটনায় হতভম্ব।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার গ্রীন সিগনাল নেই! বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ শুরু করেছেন। তারা সমালোচনা করেছেন তারেক রহমানের। এতে ক্ষিপ্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা রুহুল আমিন সহ নেতৃবৃন্দ। তারেকের অপমান হয় এমন কোন বক্তব্য না দিতে সতর্ক করা হয়েছে।
কিন্তু ছাত্র নেতারা সাফ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের জায়গায় বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য তারা আন্দোলন করেননি। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ব্যঙ্গ করে বলেছেন, তারেকও এখন ছাত্রদের দাবির পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু এসব ঠিক থাকবে কিনা তা ভবিষ্যৎ বলবে। তারেক রহমানের নাম ধরে ব্যঙ্গ করায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন বিএনপি নেতৃত্ব। আন্দোলনে নিহত বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
মোটকথা বিএনপির এখন সন্দেহ দেশে আবার ১/১১ এর মতো মাইনাস টু ফর্মূলা চালু করা হয়েছে কিনা। এই সরকারেও ১/১১ এর অনেক লোকজন। ডক্টর ইউনুস তাদের একজন। শেখ হাসিনা অলরেডি মাইনাস। খালেদা জিয়ার শারীরিক অক্ষমতার কারনে তার আর রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তারেক রহমানকেও দেশে আসতে দেয়া হচ্ছেনা। চিন্তার ভাজ বিএনপির নেতাদের মনে কপালে।
মির্জা ফখরুল এই কয়েকদিন আগে বলেছেন, তারা সংস্কারের জন্য সরকারকে উপযুক্ত সময় দেবেন। সোমবার আবার বলেছেন, সংবিধানে যেন হাত না দেয়া হয়। সংবিধানের কিছু করতে হলে তা সংসদ করবে। এই সরকারের থিংক ট্যাংকদের অন্যতম আলী রিয়াজ আমেরিকা থেকে উড়ে এসে ডক্টর ইউনুসের সংগে দেখা করে বলেছেন সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে। ছাত্রদের সমন্বয়কদের একজন হাসনাত আবদুল্লাহ এরপর বলা শুরু করেছেন বাহাত্তরে সংবিধান মূলত আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র। মির্জা ফখরুলদের ভয় ঢুকে গেছে, এই সরকারের মতলবটা আসলে কী। এরা কতদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়।
ছাত্রদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেছেন তারা সরকারে থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে দল গঠন করছে। এটা গ্রহনযোগ্য নয়। এই অধিকার তাদের কে দিয়েছে। এই ছাত্রদের জন্মের আগে জিয়াও একইভাবে ক্ষমতায় থেকে গঠন করেছেন। সামরিক উর্দি পরে উনিশ দফা বাস্তবায়ন পরিষদ গঠন করে তার পক্ষে হ্যাঁ না ভোটে শতভাগ ভোট নিয়েছেন। সেটিই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ভোটার বিহীন সবচেয়ে কারচুপির ভোট। এরপর জাগোদল নামের রাজনৈতিক দল, জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করেন। সেটিই আজকের বিএনপি। ছাত্ররা ইতিহাস পড়ে এখন যদি বলে তারা জিয়ার দেখানো পথেই হাঁটছে, তখন মির্জা হাফিজদের কান্নার শেষ থাকবেনা। হাওয়া ভবন বানিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ষোল বছর ধরে তারা কাঁদছেন।
মোটামুটি ইউনুস সরকারের লক্ষ্য আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে না দেয়া। বিএনপির চাইতে জামায়াত, এবি পার্টিকে তারা বেশি ভালোবেসেছে। ছাত্রদের রাজনৈতিক দল করার উদ্যোগ জেলায় জেলায় ধাক্কা খাচ্ছে। বিএনপি তাদের অবাধ্য হলে গ্রেফতার অভিযান শুরু হবে। কারন সারাদেশে বিএনপির চাঁদাবাজি দখলদারির হাজারের বেশি অভিযোগ এখন ইউনুস সরকারের হাতে। ছাত্রদের রাজনৈতিক দল বা তৃতীয় কোন দলের বিজয় নিশ্চিত মনে না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দেবার কোন সিদ্ধান্ত এখনও ইউনুস সরকারের নেই।
Whatsup: +413871137