বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করে চলেছে। রংপুরের সমাবেশ উপলক্ষেও দেয়া হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। সরকার এটা যথারীতি অস্বীকার করেছে। এতে সাধারন মানুষের দূর্ভোগ হলেও এর একটি ইতিবাচক দিকও আছে। পরিবহন ধর্মঘট না হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ির বহর নিয়ে যেতেন।
শ্লোগানে শ্লোগানে যাওয়া এসব গাড়ির বহরে হামলা হতে পারতো। কারন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উস্কানির অভাব নেই। অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার গরমে আওয়ামী লীগের এখন অভাব নেই অনিয়ন্ত্রিত নেতাকর্মীরও। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতেও ফেরেস্তা দল ছিল না। তখনও তারা হামলা করেছে।
এখন দেশের মানুষের কত রকমের অর্থনৈতিক সংকট! নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্যে তাদের জীবন অতীষ্ঠ। কিন্তু এসব একেকটি সমাবেশকে নিয়ে ব্যয় কত হচ্ছে? এসব ব্যয়ে জনগনের কোন স্বার্থ আছে কী? নানান বাকোয়াজি বক্তব্য দেয়া হবে। বিএনপির ব্যবসায়ীরাও কিন্তু নিজেদের নেতাকর্মীদের ফ্রি পণ্য দেন না ।
কিন্তু আদতে এসবে সরকারেরও সমস্যা হবেনা, সাধারন মানুষেরও কোন লাভ নেই। সমাবেশকেন্দ্রিক ব্যয় কষ্টে থাকা মানুষগুলোকে বাজার সদাই করে দিতে বললে কেউ তা দেবেনা। আওয়ামী লীগ বলছে তারা আরও বড় সমাবেশ করে দেখাবে! সমাবেশ কাকে বলে! এতে জনগনের কি লাভ!
যানজটে-পরিবহন সংকটে তাদের ভোগান্তি আর জীনযাপনের ব্যয় শুধুই বাড়ে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সরকারি দল চাইলেই সমাবেশ করতে পারে। কিন্তু সেদিন মানুষের যানজটের দূর্ভোগ আরও বাড়ে। মানুষ গালি দেয়। বাংলাদেশেও একদিন এসব অপচয়ের রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্নার একটি বক্তৃতা পড়ছিলাম পত্রিকায়। এক সময়কার কি দাপুটে ছাত্রনেতা। তার সামনে বসে কথা বলতে পারলেই মর্যাদার মনে হতো। কত সব বিপ্লবের পথ হারিয়ে নানাঘাটে ভুলঘাটে ঘোরাফেরার পর জাসদ-বাসদের গ্লামারাস নেতা এখন বক্তৃতার কাঙ্গাল!
যার তার একটা মাইক-মঞ্চ পেলেই বক্তৃতা দিতে ছুটে যান! জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত অখ্যাত সংগঠনের ডায়াসের বক্তৃতায় বিএনপির সমাবেশগুলোয় মানুষ হচ্ছে এতে খুব পুলক অনুভব করছেন মান্না! কারন এক সময় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের অনুগ্রহের কাঙ্গাল, এখন বিএনপির।
জনাব মান্নার মনে হচ্ছে সরকার শেষ! যে কোন মূহুর্তে পড়ে যাবে! আর তিনি ধানের শীষে নির্বাচন করে ‘তারেক স্যারের’ কেবিনেটের মন্ত্রী হয়ে যাবেন! কী যে খুশির নদী তার সামনে! এখন তিনি পার হবেন কী দিয়ে! নৌকাতো আওয়ামী লীগের প্রতীক। আর সেতুটাও শেখ হাসিনার সরকার বানিয়েছে।
আওয়ামী লীগ করেছেন মান্না, কিন্তু শেখ হাসিনাকে চিনতে পারেন নাই! এই শেখ হাসিনা যে টুয়েন্টি ফোর সেভেন প্রাইম মিনিস্টার, এরজন্যে ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায়। তিনি ধুমসে কাজ করে যাচ্ছেন। কাজে অনিয়ম চুরি হচ্ছে। এটা বাংলাদেশে সব সময় হয়। আগামীতেও হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের দৃশ্যমান কাজ দেখছে দেশের মানুষ।
আগামী নির্বাচনের আগেই বিদ্যুৎ সমস্যার সহনীয় হবে । বাংলাদেশের মানুষ অবিশ্বাস্য মেট্রো রেলে চড়বে। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে দ্রুত চলে যেতে পারে দক্ষিন বাংলায়। আর কিছুদিন বাদে তারা কর্নফুলি টানেল পেরিয়ে চলে যাবে ওপারের অর্থনৈতিক অঞ্চলে। আওয়ামী লীগের এসব অর্জন কেউ মাটিচাপা দিতে পারবেনা।
১/১১ এর সময়কার সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেনদের কথায় বিশ্বাস করে মান্নাগং দিশা হারিয়েছেন। শেখ হাসিনা জেল থেকে বেরিয়ে মান্নাকে বহিষ্কার করেননি। অবিশ্বস্ত সুলতান মনসুরের মতো অপাংক্তেয় করে রেখেছিলেন যাতে নিজে নিজে চলে যান। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নিজেকে হারিয়ে খোঁজেন মান্না! বারবার ঈমান বদলান!
গত নির্বাচনের আগে তার ইমাম ছিলেন ডক্টর কামাল হোসেন। এখন তার ইমামের নাম তারেক রহমান। ইনারা সবাই শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগকে ভাসমান কচুরিপানা মনে করে ভুল করেন। শেখ হাসিনার সরকারের জায়গায় তারেক রহমানের সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখন তার চোখেমুখে!
দিল্লী বহুত দূর মাহমুদুর রহমান মান্না। নিশ্চয় বুঝতে পারেন, এটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিবর্তিত আওয়ামী লীগ। শুধু জনগন-দলই এখানে ক্ষমতার মাপকাঠি নয়। ১৪ বছরে সামরিক-বেসামরিক আমলা প্রশাসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে একটি শ্রদ্ধার শপথ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এখন দেশের প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধানও শপথ নিয়েই আবার বঙ্গবন্ধুর মাজারে শপথ নিতে চান। কিন্তু মান্নাদের এই রাজনীতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আবার উপড়ে ফেলার পক্ষে! এক বিপর্যয় কি বারবার হয়?
মান্না তাদের সঙ্গে ঐক্য করে মন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখেন যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার করতে চেয়েছে এবং আগামীতেও চাইবে। আওয়ামী লীগের এই প্রশাসন মান্নাদের সেই সুযোগ দেবেনা। গণতন্ত্রের মোড়ক এখানে নিজের মত করে ক্ষমতায় থাকা অথবা ক্ষমতায় যাবার শিরোনাম মাত্র।