প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

বিএনপির ডিমেরিটস পয়েন্ট তারেক

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ০০:২১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ০০:৩২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিএনপির ডিমেরিটস পয়েন্ট তারেক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে নেই। রানীর শেষকৃত্যের পর ব্রিটেন থেকে গেছেন আমেরিকায়। দেশে বিএনপি নেতারা গরম। আমেরিকা থেকে নানান নিষেধাজ্ঞা জোগাড় করেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানান গুরুত্বপূর্ণ সভায় অংশগ্রহনে তাদের মন ভালো নেই।

টেলিভিশনে যদি মির্জা ফখরুল বা আমানউল্লাহ আমানদের বক্তৃতা দেখেন মনে হবে যেন ফুটছেন! যেন মুখের ওপর একটা ডিম রাখলেই হাফ বয়েল হয়ে যাবে! সাবেক জাসদ আব্দুস সালামও ভীষন গরম। সাবেক জাসদ গয়েশ্বর রায়েরও মন ভালো নেই। কারন বকেয়ার কারনে তার বাড়ির গ্যাস লাইন কাটা পড়েছে।

সাদা বাংলায় বক্তৃতা কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের! যদিও আদতের নিয়ত না নয়। অনেকদিন ক্ষমতায় নেই। পকেটের টাকায় কতদিন আর চলা যায়। আমানউল্লাহ আমান ডাকসুর ভিপি ছিলেন। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ব্যবসায়ীরা তার কাছে ব্রিফকেস ভর্তি টাকা নিয়ে যায়!

আন্দোলন বিক্রি হয়ে যায় তখনই। বিএনপি আমলে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন আমানউল্লাহ আমান। তার কোথায় কয়টা বাড়ি-ফ্ল্যাট এসবের ফিরিস্তি দিয়ে রিপোর্ট ছেপেছে তাদেরই পত্রিকা মানবজমিন। বিএনপির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের ঘৃতাহুতির কারনও ছিলেন আমানউল্লাহ আমান!

তার লোকজন সচিবালয়ে লিফটের ভিতরে দূর্ব্যবহার করে। প্রতিবাদে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। স্বাধীন বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটেছে দু’বার। একবার এরশাদের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়বার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।

এসব নতুন প্রজন্ম জানেনা বা পুরনো প্রজন্ম আর বলছেননা। আবার বিএনপির দলটাই গণতান্ত্রিক নয়। পারিবারিক রাজনৈতিক দোকান। জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে এই দোকানের মালিকানা পান তার বিধবা পত্মী খালেদা জিয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় দোকানের ভার্চুয়াল মালিক এখন তার ছেলে তারেক রহমান। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়তে চাননি বলেই পনের ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন করেছিলেন। শেখ হাসিনা তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছেন।

শেখ হাসিনার ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচন সফেদ নয়। কিন্তু খালেদা জিয়া আর বিএনপি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে পারলেননা কেনো? কিছু ঘটনা আজকাল একদম বলা হচ্ছেনা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যকর হয়েছে।

জিয়াউর রহমান যদি এই খুনের সঙ্গে জড়িত না থাকবেন তাহলে খালেদা জিয়া কিসের মায়ায় এই বিচার ঠেকিয়ে রেখেছিলেন? কিসের মায়ায় খুনিদের সংসদ সদস্য করেছিলেন? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারনে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বিচার ও তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

ফাঁসিতে অক্কা পাওয়া একজন ছিলেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এদের বিচার হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি উল্লসিত হয়েছে। বিএনপির ভূমিকা তারা পছন্দ করেনি। এরজন্যে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ থাকলেও মানুষ সরকারেরর বিরুদ্ধে যায়নি।

আর কোন দল কখন ক্ষমতায় থাকতে তারা ফেরেস্তা ছিলেন আর দেশ বেহেস্তে ছিল এসব মানুষের ঢের মনে আছে। হ্যাঁ-না ভোটের নামে এদেশে নির্বাচনে সাগর চুরির জনক জিয়া-এরশাদ। স্বৈরাচার এরশাদের ১৯৮৮ নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি ওঠে।

কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নির্বাচন পর্যন্ত দেশে প্রশ্নহীন থাকেনি। যে যখন নির্বাচনে হেরেছেন তারা ফলাফল মেনে না নিয়ে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। খালেদা জিয়া একবার বলেছেন এসব পাগল আর শিশুর হাটবাজার! ২০০৫ সালে বিএনপির ইয়াজউদ্দিন কান্ডের কারনে দেশে ১/১১ আসে।

এরপর সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়কে ভূমিধস বিজয়সহ ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। এরপর সংবিধান সংশোধনের সুযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগ এটাকে বিলুপ্ত করেছে। কারন আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুটিই রাজনৈতিক দল। কেউ সেবা সংস্থা নয়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ভালো মানুষি দেখিয়ে ঠকেছে।

এমনিতে বাংলাদেশের প্রধান কোন দলই আর গণতান্ত্রিক নয়। সবাই যার যার মতো গণতন্ত্রের একটি সংজ্ঞা সাজিয়ে বানিয়ে নিয়েছেন। এটা ডাঃ কামালের দল থেকে জোনায়েদ সাকি সবার ক্ষেত্রেই সমান। তারাই নেতা। আমৃত্যু নেতা। খালেকুজ্জামান কত বছর ধরে বাসদ নেতা?

বিএনপির নেতারা প্রেসক্লাবের সামনের দৈনিক সমাবেশে চিৎকার করে বলেন, রাজপথের আন্দোলনে তারা শেখ হাসিনাকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা নামাবেন! এটা শেখ হাসিনা বললে মানুষ সত্য মনে করতো। কারন বিএনপি নেতারা বাসায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদনপত্র লেখে।

খালেদা জিয়াকে অনুগ্রহপূর্বক গুলশানের বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়ে বাধিত করা আবেদনপত্র। এভাবে বিএনপি এই কয়েকদিন আগেও শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় থাকার সুযোগ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে। মুখে তারা বলে আবেদন করেছে খালেদা জিয়ার পরিবার!

রাজপথে দাবি আদায়ের মুরোদ থাকলে বিএনপি বলতো আমরা আর শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করবোনা। শেখ হাসিনার মুরোদ থাকলে খালেদাকে আবার জেলে নিক। বিএনপি এটা যে করবেনা এটা শেখ হাসিনাও জানে। কারন খালেদা জিয়ার সঙ্গী চরিত্রের নাম গৃহপরিচারিকা ফাতেমা।

আবার খালেদা জিয়াকে জেলে নিলে আবার কী গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে পাওয়া যাবে? যে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যা করতে চেয়েছিলেন সেই খালেদার উদ্দেশে শেখ হাসিনার অনুপম উপহার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা! এমন দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় বিরল।

এমনসব ঘটনা সমূহ জনগনের সামনে বিএনপির ডিমেরিটস পয়েন্ট। বিএনপির দাবি মতে ‘খালেদা জিয়াকে প্রহসনের সাজানো মামলায় জেলে নেয়া হয়েছে’! এই মামলার জেনুইন প্রমানপত্রাদি থাকায় কতবার কতভাবে তারা এই মামলার শুনানি-বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছিল?

খালেদা জিয়াকে যেদিন প্রথম জেলে নেয়া হয় সেদিন সরকারের অনেকের ভয় ছিল বিএনপি রাস্তায় বিশেষ কোন সমস্যার সৃষ্টি করে কিনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের অবাক করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ছেলে ঘরে ফিরে যায়। সেদিনই আওয়ামী লীগ এই বিএনপির মুরোদ বুঝেছে।

১/১১’র সময়কার সরকার শেখ হাসিনাকে বিদেশে আটকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা গ্রেফতারের ঝুঁকি নিয়ে দেশে এসে গ্রেফতার হয়েছেন। আর বিএনপির এই নেতা তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবার সুযোগ নেন।

কারন হাওয়া ভবন দুর্নীতির কারনে তারেক রহমান তখন দেশে-বিদেশে নিন্দিত চরিত্র। সাবেক সেনা প্রধান-রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে ১/১১’র সরকার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়েছে। এর পোশাক পরিয়ে মিডিয়ায় ছবি দিয়েছেন। এরপর মেরুদন্ডের চিকিৎসার কথা বলে তারেক যান বিলাতে।

তার সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব-পাসপোর্ট সারেন্ডারের খবর দীর্ঘদিন গোপন রেখেছে বিএনপি। বারবার বলেছে মেরুদন্ডের ব্যথা কমলেই তিনি দেশে আসবেন। কিন্তু তের বছরেও তার মেরুদন্ডের ব্যথা কমেনি। মেরুদন্ডওয়ালা নেতা হলে তারেক দেশে এসে গ্রেফতারবরন করতেন।

কিন্তু নিজের দলের মুরোদ তারেকও জানেন। তাই দেশে এসে গ্রেফতারবরন করে দেশেবিদেশে আলোচিত নেতা হবার ঝুঁকি নেননি। দেশেবিদেশে তারেকের ফুলের মতো চরিত্র জানেন বলেই বিএনপির বুদ্ধিজীবী ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী তারেকের বদলে তার মেয়ে জাইমাকে নেতৃত্বে চান। বিএনপির ক্ষমতায় যাবার বড় ডিমেরিটস এখন গিয়াসউদ্দিন মামুনের পার্টনার তারেক।