প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

শেখ হাসিনাকে সারেন্ডারের সময় বেঁধে দেবেন আ স ম আব্দুর রব

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

শেখ হাসিনাকে সারেন্ডারের সময় বেঁধে দেবেন আ স ম আব্দুর রব

আওয়ামী লীগ সরকারকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সারেন্ডারের সময় বেঁধে দেবেন স্বৈরাচার এরশাদের দালাল, গৃহপালিত বিরোধীদলের নেতা আ স ম আব্দুর রব! রাজনৈতিক বক্তৃতার শিরোনাম হিসাবে কথাগুলো চটকদার। কিন্তু মুকুট হারানো নেতার কোমরের সেই জোর যে আর নেই।

আ স ম আব্দুর রব ছিলেন একটি সময়ের নায়ক চরিত্র। তার এখনকার চরিত্রটি খল নায়কের! ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে, ডাকসুর ভিপি হিসাবে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তুলেছিলেন আ স ম রব। মুক্তিযুদ্ধে যেতে বঙ্গবন্ধুর কাছে বিদায় নিতে এসে এক মুঠো টাকাও পেয়েছিলেন পথ খরচার।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক উপাধিও দেন আ স ম আব্দুর রব। স্বাধীনতার পরেও ক্ষমতার মোহ মাড়িয়ে জাসদ নেতা হিসাবে বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখানো বিপ্লবী চরিত্র! কিন্তু কালের বিচারে আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বের জাসদ ব্যর্থ হয়েছে।

জাসদের নানান খন্ড এখন একেক টুকরো সোনালী অতীত সংঘ। মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় গেলে এমন সোনালী অতীত সংঘ বা ক্লাবের একটা অফিস-ক্লাবও দেখবেন। এক সময় তারা ভালো খেলতেন। সেই সোনালী দিনগুলো এখন অতীত। আ স ম আব্দুরদের অবস্থাও তাই।

এখন এদের সবার মধ্যে আ স ম আব্দুর রবের জাসদ খন্ডটি স্বামী-স্ত্রীর দল। আ স ম রব-তাহমিনা রব। এর নানা খন্ডের কারও আওয়ামী লীগের কারও বিএনপির কৃপা প্রার্থনা করে দিন কাটে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী হন আ স ম আব্দুর রব।

শেখ হাসিনা তার কাছে তখন অনেক ভালো ছিলেন।শেখ হাসিনা কী কারনে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দিয়েছেন তা শেখ হাসিনা জানেন। আ স ম আব্দুর রব জানেন। ভদ্রতাবশত শেখ হাসিনা তা খুলে বলেননি। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ার ক্রোধ-দূঃখ ভোলেননি আ স ম আব্দুর রব।

শেখ হাসিনাকে তিনি এখন সারেন্ডার করাবেন! কোমরে জোর থাকতে হবেতো! একদার লড়াকু চরিত্র আ স ম আব্দুর রব সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হিসাবে সব খুইয়েছেন। সারা বাংলাদেশ যখন সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রামে লিপ্ত তখন আ স ম আব্দুর রব নাম সর্বস্ব ষাট-পয়ষট্টি দল দেখিয়ে তাদের নেতা হিসাবে ছিলেন এরশাদের মন্ত্রনাদাতা!

তার এক সময়ে অনুসারী সতীর্থ বাসদের একাংশের নেতা আ ফ ম মাহবুবুল হক বলতেন এরশাদের মাগুর মাছের প্রকল্পের লোভ যখন কেউ সামাল দিতে পারেনা তার তখন কোন চরিত্র, আদি কৃতিত্ব কিছুই অটুট থাকেনা। সেই মাগুর মাছের প্রকল্পের বিনিময়ে এরশাদের কাছে মাথা বিক্রি করে আ স ম আব্দুর রব অর্থ কত পেয়েছিলেন তা তিনিই বলতে পারবেন।

অবশ্য তখন শুধু আ স ম আব্দুর রব নন, তারও আগে তার অনুসারী ডাকসুর জিএস জিয়াউদ্দিন বাবলুও এরশাদের কাছে মাথা বিক্রি করে নিন্দিত হন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি সাধারন সম্পাদক গোলাম সারোয়ার মিলন, জালাল আহমদ আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করে এরশাদের টোপ গিলেন! মোটকথা এসব দলের সবার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র নন।

ষাট-পয়ষট্টি নাম সর্বস্ব দলের নেতা আ স ম আব্দুর এখন নতুন কিছু খুচরা দল নিয়ে গড়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চ! এখানে সবাই ছোটদলের বড় নেতা! গত নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট করে ডাব্বা মারা নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। এই জীবনে তিনি জাসদ-বাসদ-জাগমুই-আওয়ামী লীগ সব করে এখন নাগরিক ঐক্য নামের বিশাল দলের নেতা!

জোনায়েদ সাকির দলের নাম গণসংহতি আন্দোলন! সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি! গতবার ধানের শীষে নির্বাচন করে ডাব্বা মারা রেজা কিবরিয়া গণফোরামে গণ ধিক্কার খেয়ে অতঃপর বিকাশ নুরুর সঙ্গে দল গড়েছেন! বিশাল বিশাল এসব দলের মূল প্রার্থনা বিএনপির কৃপা!

এরা সবাই মিলে ধরে নিয়েছেন তারা সারেন্ডারের হুমকি দেবেন আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বসে বসে বাদাম খাবেন! আওয়ামী লীগের অনেক সমস্যা অসম্পূর্ণতা আছে। কিন্তু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দেশে-বিদেশে অর্জন অনেক বেশি। এবারও বিলাতে-আমেরিকায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর আত্মবিশ্বাসী বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিশ্চয় তারা দেখেছেন।

আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আছে বলে দেশে-বিদেশে এত কাজ করতে পারছে। বিএনপি ক্ষমতায় যেতে মরিয়া কারন তারা দেশে-বিদেশে শুকিয়ে মরছে। হাওয়া ভবনের তারেক রহমানকে আ স ম আব্দুর রবরা ক্ষমতায় বসানোর স্বপ্ন তাদের দুঃস্বপ্ন হবে।

কারন তারেক রহমান মানেই গ্রেনেড হামলা, তারেক রহমান মানেই দশ ট্রাক অস্ত্র। বিএনপির ক্ষমতা মানে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের ক্ষমতায়ন। বাংলাদেশে যা আর ঘটবেনা। আর এই বিএনপিতো শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করে খালেদা জিয়াকে জেলখানার বাইরে গুলশানের ফিরোজায় রাখা দল।

আওয়ামী লীগকে রাজপথে মোকাবেলার ক্ষমতা-ঘিলু যদি বিএনপির থাকতো তাহলে আওয়ামী লীগ এভাবে টানা ক্ষমতায় থাকতে পারেনা। কাজেই আওয়ামী লীগের সারেন্ডার নয়, এরশাদের কাছে সারেন্ডার করা আ স ম আব্দুর রবেরতো এখন নিয়তির কাছে সারেন্ডার করার বয়স। ইতিহাসের নায়ক খলনায়ক হয়ে পড়ায় তার শেষ দিনগুলো ভালো কাটলোনা।