করোনায় বাংলাদেশের অনেককিছু যেন এখন অনেকটা ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে’র মতো! মরতে মরতে যা থাকে আর কী! অতঃপরও বলা শুরু হয় মৃত্যু কম হচ্ছে! এটা অমুক অমুকের সাফল্য! করোনায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
বাংলাদেশের মতো আইন না মানা বিপুল জনসংখ্যার দেশ আর সীমিত সামর্থ্যের সরকরের জন্যে এটিই যেন নিষ্ঠুর নিয়তি! বিশ্বের দেশে দেশে এই মহামারী এরমাঝে বিপুল অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্যে চিহ্নিত। নতুন লেনদেনের ভয়ে অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশও আর লকডাউনে যেতে চাইছেনা।
কারন লকডাউনে গেলেই সপ্তাহ শেষে জবকিপার-জবসিকার পেমেন্ট গুনতে হয় সাড়ে সাতশ ডলার! জবকিপার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্ধ করা হলেও বেকার ভাতা তথা জবসিকার পেমেন্ট বন্ধ নেই। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে শত বিলিয়ন ডলারের নানান ভূর্তকি গুনতে হয়।
যে দেশে আগে করোনার টেস্ট কেন্দ্রগুলো রাত পর্যন্ত খোলা থাকতো তা এখন বন্ধ করে দেয়া দুপুরের মধ্যে! বাংলাদেশ শুরু থেকে যা করেছে। পিসিআর টেস্টের ব্যয় প্রস্তুতি বাংলাদেশের শুরুতে সেভাবে নেয়া ছিলোনা। বাংলাদেশে লকডাউনও অকার্যকর প্রমানীত হয়েছে।
কারন লোকজন পড়ি কি মরি করে হেঁটে রিকশায় যে যেভাবে ঢাকা সহ কর্মস্থলের উদ্দেশে ছুটে যায়। সেনাবাহিনী নামিয়েও তাদের নির্বৃত্ত করা যায়নি। জীবিকা হারানোর ভয় থেকে মানুষ জীবন হারানোকে তুচ্ছজ্ঞান করে! সীমিত যাত্রীর কথা বলে বারবার ভাড়া সহ মানুষের নানান ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
অথচ তাদের আয় বাড়েনি। এসব স্বত্ত্বেও অনলাইন এক্টিভিস্টরা লগো বানিয়ে প্রচার করেছেন আড়াই হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে! পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে! কিন্তু আড়াই হাজার টাকায় এখন একটি পরিবারের কি হয় আর একেকজন থেকে কত পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা আর লগো ছাড়াও বলেননা!
অতএব করোনা মোকাবেলার সাফল্যটা কার, কিসে সাফল্য তা কেউ ব্যাখ্যা সহ জানেনা! বাংলাদেশের মতো দেশের সিংহভাগ মানুষ যেহেতু আইন মানেননা তাদের নিয়ে পৃথিবীর আইনানুগ দেশগুলোর মহামারী নিয়ন্ত্রনের গল্প বলাও অসার চেষ্টা মাত্র!
উন্নত দেশগুলোর করোনা অর্থনীতির সামর্থ্যও বাংলাদেশের মতো দেশের নেই। আবার কম সামর্থ্যের ভূটানের সাফল্যের ধারে কাছেও অনেকে যেতে পারেনি। করোনার প্রথম ঢেউ মোকাবেলার সময় বাংলাদেশের সামাজিক সংগঠনগুলো বিপুল ভাবে এগিয়ে এসেছিল।
মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছিলো খাবার। পুলিশ-বিজিবি-সেনাবাহিনী সহ সবাই যার যার মতো করে খাদ্যসহ নানান সহায়তা দিচ্ছিলো, সেই উদ্যোগ সমূহও এখন আর নেই। অতএব ভাত দেবার মুরোদ নেই কিল মারার ঘোসাই সেজে আর কি হবে!
ডেল্টার পর অমিক্রনের তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের নাম ভ্যাকসিন সাফল্য। অনেক দেশ প্রায় শতভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেবার পর বুস্টারের নামে তৃতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। ইসরাইল দিচ্ছে চতুর্থ ডোজ!
আর বাংলাদেশ শতভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেবার প্ল্যানই করতে পারেনি! শুরুতে ভারত থেকে কম টাকায় ভ্যাকসিন কেনার প্ল্যান ছিল। ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সংকটে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর বেশি টাকায় ভ্যাকসিন কিনতে কিনতে গড়বড় হয়ে যায় সব।
এরমাঝে ভ্যাকসিন কেনায় দুর্নীতির ইঙ্গিত করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এরা এসবের খোঁজ-খবর রাখেন অথবা পেয়ে যান! বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি, ৩ লাখ ১৭ হাজার এবং এর বৃদ্ধি চলমান। এই জনসংখ্যার ৭০ ভাগকে ভ্যাকসিন দেবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।
এদের মধ্যে ১১ কোটি ১২ লাখ ১১ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৯ কোটি ২৪ লাখ ২৬ হাজার ২৩৩ জনকে। ৫ কোটি ৮০ লাখ ৫ হাজার ২৫৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ভ্যাকসিন।
স্কুল যে এখন দুই সপ্তাহের জন্যে বন্ধ করা হয়েছে কারন শতভাগ স্কুল ছাতছাত্রীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায়নি। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল ছাত্রছাত্রীদের ১ কোটি ২৮ লক্ষকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। স্কুলে ভ্যাকসিন দেবার লক্ষ্যমাত্রাই ছিল ১ কোটি ২৯ লক্ষ স্কুল ছাত্রছাত্রীদের ভ্যাকসিন দেবার!
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন স্কুল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংক্রমন দেখা দেয়ায় স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে। এরমানে দুই সপ্তাহ নয়, স্কুল খুলতে দেরি হবে। আবার দেশের সবকিছু খোলা রেখে স্কুল বন্ধ রাখার সমালোচনা শুনতে হবে সরকারকে। উপায়ও নেই।
বাচ্চারা দ্রুত সংক্রমনশীল অমিক্রনে আক্রান্ত হতে থাকলে অভিভাবক বিদ্রোহ থামানো যাবেনা। মা-বাবা’র সাইকোলজি হলো নিজে ঝুঁকিতে গিয়ে হলেও সন্তানদের বাঁচাতে চান। বেশিরভাগ শিক্ষক নিরাপদভাবে মাস্ক পরতেও জানেননা অথবা পরেননা।
করোনা মহামারীর শুরু থেকে বাংলাদেশের মতো দেশের নানান সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেতে শুরু করে। ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রকাশ পায় দেশের করোনা টেস্টের সামর্থ্য! সীমিত টেস্টের জন্যে দেশে প্রকৃত করোনা রোগী কখনোই জানা সম্ভব হয়নি।
তাই চূড়া বুঝতে বুঝতে লোকজন মরতে মরতে ঢেউ গোনা শেষ হয়ে যায়! প্রতিবার দেখা যায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হাতপা ছুঁড়েন টেলিভিশনে! কারন তাদের কথা-পরামর্শ কেউ শোনেনা। টেলিভিশনে তারা বলেন এককথা আর প্রশাসনিক নির্দেশ আসে উল্টো!
করোনার শুরুতে বাংলাদেশে ভোগান্তির কারনে এক পর্যায়ে লোকজন টেস্ট করতে যাওয়াই বন্ধ করে দেয়। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং ব্যবস্থা এখনও দূর্বল। অথবা সে চেষ্টাও হয়না। বেশিরভাগ লোকজন আইসোলেশন মানেনা। তাদের নজরদারির চেষ্টাও নেই। সেই যে ঘরে ভাত না দিয়ে কিল মারার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
একেকটা ঢেউ’এর সময় প্রকৃত করোনা রোগীর সংখ্যা জানতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ঘরে ঘরে গিয়ে পরীক্ষা করা। সেটা হয়না। পিসিআর টেস্টও ব্যয়বহুল। রেপিড টেস্টও সুলভ করা হয়না। মহামারীর নিয়ম হচ্ছে চূড়ায় গিয়ে তা ধীরে ধীরে শক্তি হারায়। সেটাকে বাংলাদেশে নাম দেয়া হয় সাফল্য!
এখন তৃতীয় ঢেউকে সামনে রেখে বলা হচ্ছে ভ্যাকসিন সনদ দেখাতে হবে। এখন যদি একজনকে ডাবল ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া না থাকে তাহলে এই সনদ দেখিয়ে কী লাভ? ডাবল ডোজের পরওতো একজন করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তখন করোনা অবশ্য তার বড় কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।
এখন দেশের আর সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’সপ্তাহের জন্যে বন্ধ করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। জবিতে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। ঢাবিতে ক্লাস সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকবে কিন্তু হলে থাকা যাবে। কি সব এলোপাতাড়ি কথাবার্তা!
আগে জানা গিয়েছি ইন্টারনেটের স্লথগতি আর ডিভাইসের অভাবে অনলাইন ক্লাসের সাফল্য এসেছে সীমিত পর্যায়ে। মহামারীর মধ্যে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন চলছে! শিক্ষামন্ত্রী এই মহামারীর মধ্যে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় বৈঠকে আসতে বলেছিলেন!
কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েগুলো কতটা বিজ্ঞ! তারা বলে দিয়েছে এই সময়ে ঢাকায় কেনো যাবো! বৈঠকওতো হতে পারে অনলাইনে। আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সম্পর্কে অশ্রাব্য বক্তব্য দেয়া স্বত্ত্বেও সরকার তাকে ভিসির পদে রাখবেই! বেহায়াটা নিজেও যাবেনা।
মির্জা ফখরুল করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় এই সময়ে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আন্দোলন স্থগিত হওয়াতে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন। মির্জা সাহেব সুস্থ হয়েছেন। তিনি এখনই যাতে নেতাকর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দেন।
প্রিয় সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সতর্ক-সাবধান হোন। না হলে অন্যদেশে দূর্বল চিহ্নিত অমিক্রন বাংলাদেশে শক্তিশালী হামলা চালাতে পারে! স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দূর্বল হওয়াতে শরীরে যে মানুষের কত রোগ বাসা বেঁধে আছে তা তারা জানেনা।
এরজন্যে করোনা হতেই মারা গেছেন দেশের অনেক মানুষ। মানুষের মৃত্যু মিছিল থামছেইনা। নিজেরা বাঁচতে না চাইলে সরকার বা কেউ মহামারীর মৃত্যু্মিছিল থামাতে পারবেনা।