নারায়নগঞ্জের এক পরিবারের শান্তিতে ভোট দিতে পারার আনন্দ
রবিবার বাংলাদেশ সময় সকাল থেকে নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচনের খোঁজ রাখছিলাম অনলাইনে। ইভিএম’এ স্লো ভোটের অভিযোগ লিখছিলেন অনেকে। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রার্থী, ভোটার, সাংবাদিক সবারই নানান অভিযোগ। কিন্তু নাসিক নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ন।
বিপুল সংখ্যক ভোটার এই নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটারদের লম্বা লাইনের কারনে ভোটের সময় শেষ হবার পরও অনেক কেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়েছে। মোটকথা এত ভোটার অনেক দিন দেশের মানুষ দেখেনি। এরপরও পান থেকে চুন খসলে রেহাই নেই!
শুরুতে ভোটের ধীরগতির কারন হতে পারে ভোটার আর ভোট কর্মীদের অনভ্যস্ততা। এসব দিনে দিনে ঠিক হবে। ভারতের মতো বিশাল দেশে যন্ত্রে ভোটগ্রহন স্বাভাবিক করতে অনেক দিন লেগেছে। এখনও তাদের যন্ত্র নিয়েও অনেক কথা হয়। বাংলাদেশ কথা হয় একটু বেশি।
কাজেই ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ নতুন কিছু চিন্তাভাবনা শুরু করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থাটা শেয়ার করছি। ভোট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার চিত্রটি উল্টো। কাজ পাগল এই দেশটির মানুষজনকে ভোটে আনতে জরিমানা সহ নানা ব্যবস্থা করতে হয়েছে। ভোট না দিলে এদেশে জরিমানা হয়।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর সব ভোটারকে ডাকযোগে পাঠানো হয় পোস্টাল ব্যালট। সেখানে বিনীতভাবে বলা হয় পোস্টাল ব্যালটে হলেও যাতে তিনি ভোটটা দেন। জাতীয় নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনে তার ভোট-মতামত গুরুত্বপূর্ন। এদেশে ভোট উপলক্ষে কোন মিছিল মিটিং হয়না।
ফান্ড রেইজিং ডিনার অথবা লাঞ্চ হয়। প্রার্থীরা সকালে ট্রেন বা বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের লিফলেট বিলি করেন। অথবা লিফলেট দেন সবার লেটারবক্সে। আপনি যারতার বাড়ির দেয়ালে বা যেখানে সেখানে ভোটের পোস্টার লাগাতে পারবেননা। জরিমানা হয়ে যাবে।
কারও বাড়ির দেয়ালে বা দোকানে পোস্টার লাগাতে চাইলে আগে তার অনুমতি নিতে হবে। ভোটের পর তা সরাতে হবে নিজেই উদ্যোগে। নতুবা জরিমানা হয়ে যাবে। জরিমানা এদেশে এক সময়কার বাংলাদেশের শিক্ষক বা হুজুরদের হাতের বেতের মতো!
এই রাষ্ট্র সারাক্ষন বেয়াড়া নাগরিকদের পিছনে জরিমানা নামের বেত নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আপনি প্রধানমন্ত্রী হন আর জিএম কাদের হন, জরিমানার চিঠি পেলে আপনাকে তা পরিশোধ করতেই হবে। অপরাধী প্রধানমন্ত্রী হোন আর যেই হোন, এদেশের সংশ্লিষ্টরা তাকে জরিমানা করতে পিছপা হননা।
অস্ট্রেলিয়ায় ভোট হয় শনিবারে। স্থানীয় স্কুল বা কমিউনিটি সেন্টারে ভোটকেন্দ্র হয়। সেখানে কর্মীরা ভোটের প্রচারপত্র নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়াতে পারেন। ভোটের আগে বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা আর্লি ভোট সেন্টার। যেমন শনিবারের ভোটের দিন আপনার কাজ থাকতে পারে।
আপনি বাজার করতে এসেও এমন আর্লি ভোট সেন্টারে ভোট দিয়ে রাখতে পারেন। নির্বাচনী কর্মকর্তারা আপনার পরিচয়পত্র দেখে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভোট নিয়ে ডাকযোগে তা আপনার নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন অফিসে পাঠিয়ে দেবেন।
পোস্টাল ব্যালট-আর্লি ভোট সেন্টারের ভোট অনেক সময় নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে। নির্বাচন নিয়ে অরাজক নানা কিছু নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশ এমন অগ্রিম ভোটের কথা ভাবতে পারে। যাতে টাঙ্গাইলে থাকা লোকটিও যাতে শান্তিতে তার ফরিদপুরের ভোটে অংশ নিতে পারে।