প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

কী কারনে লিভার সিরোসিস হয়েছে খালেদা জিয়ার

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ০৩:২৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

কী কারনে লিভার সিরোসিস হয়েছে খালেদা জিয়ার

অমিক্রন আতঙ্কের মাঝে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরশন নির্বাচন এখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক ইভেন্ট। সরকার এই অবস্থায় সভা-সমাবেশে নিরুৎসাহের কথা বলেছে। কিন্তু নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে কোন বক্তব্য নেই! এরমানে সরকারও চাইছে নির্বাচনটা হয়ে যাক!

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে অনেকদিন পর বিএনপির নেতাকর্মীরা বিপুলভাবে মাঠে নেমেছেন। মহামারীর এই সময়ে এ ধরনের সভা-সমাবেশের ফলাফল যা হবার ছিল তাই হয়েছে! বিএনপির জমজমাট সভা-সমাবেশ হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়েছে মির্জা ফখরুলের সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হবার ঘটনায়।

এর আগে রুহুল কবীর রিজভীও করোনায় আক্রান্ত হন। মহামারীর এই সময়ে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির আরও যে কত নেতা-কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অথবা আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে পড়েছেন তা কেউ জানেনা বা জানার চেষ্টাও করবেনা!

রানীর জীবন রক্ষায় প্রজা-কর্মচারীদের জীবন বিপন্ন হতেই পারে। বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি শুরু থেকেই দূর্বল। এখনতো সহজে কেউ পরীক্ষা করাতেও যায়না। মির্জা ফখরুল সর্বশেষ যে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, তার আশেপাশে যারা দাঁড়িয়েছিলেন তাদের করোনা পরীক্ষার কথা বিএনপি বলে দিলে দায়িত্বশীল কাজ হতো।

বিএনপি দলটি তা করেনি। দায়িত্বশীল হওয়াটা শুধু সরকারি দলের কাজ নয়। এই মহামারীতে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী তুলনামূলক বেশি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার মন ভালো সময়েও তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেনো কমে গিয়েছিল সে ব্যাখ্যাও দেয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগ বলার চেষ্টা করেছে ত্রান কার্যক্রমে বেশি অংশ নিতে গিয়ে তাদের নেতাকর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন বেশি। প্রাণ দেয়াতে বড়াই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাসপাতালে যারা করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেন, তাদের যারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন তাদের আক্রান্ত-মৃত্যুবরনের ঘটনা কম।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে সামান্য অসতর্কতার অভাবের কারনে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন-প্রান দিচ্ছেন। পুলিশ অথবা সাংবাদিকের মতো ফ্রন্টলাইনাররা জানেননা তাদের আশেপাশের কারা করোনা রোগী। তাদের বেশি আক্রান্ত হবার কারন তারা মাস্ক পরলেও তা সাধারন সার্জিক্যাল মাস্ক।

এন নাইন্টিফাইভ মাস্ক-গগলস-ফেস শিল্ড পরে থাকলে এই ঝুঁকিটা কমায়। বাংলাদেশের সাংবাদিক সহ নানা পেশার মানুষের রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা এমনিতে হয় কম। শরীরে কোন রোগটা বাসা বেঁধে আছে তা তাদের বেশিরভাগ কম জানেন। অনেকে শেষ সময়ে চিকিৎসা নিতে যান।

এই মহামারীর সময়ে নিজেদের নিরাপত্তা-জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে মাঠে নামছেন। দেশে চিকিৎসা নেই সব চিকিৎসা বিদেশে, বলতে বলতে দেশী চিকিৎসকদের সাফল্যের কারনেই খালেদা জিয়া সিসিইউ থেকে কেবিনে যেতে পেরেছেন।

খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে জামিন চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে বিএনপির আইনজীবীরা কি করেছিলেন তা নিশ্চয় মনে আছে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন অমুক দিন জামিনের শুনানি হবে। ‘কিন্তু এরমাঝে যদি ম্যাডামের কিছু হয়ে যায়!’ এ কথা বলে বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে সেদিন বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন।

আপীল বিভাগে সেই শুনানির পর বেগম জিয়াকে জামিন দেয়া হয়নি। উল্টো পরে বেগম জিয়ার সাজার পরিমান বাড়ানো হয়। বিএনপির আইনজীবীরা কিন্তু এর প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্ট বা আপীল বিভাগের আদালত বর্জন করেননি।

উল্টো আপীল বিভাগে আক্রমনের ঘটনায় সাজা হয় কিনা তা নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অর্থকরী সব পেশার মতো আইন পেশায়ও টাকা কামাইই মূখ্য। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপীল বিভাগ যে বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্যে জামিন দেয়নি সে কথা অনেকে ভুলেই গেছেন।

বিএনপির আইনজীবীরা তা মনে রেখে দাওয়াত ঠিকমতো না পাবার কথা বলে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনা বর্জন করেন।

খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস রোগের বিপুল প্রচারে লাভ যেটা হচ্ছে তাহলো দেশের অনেক মানুষ এখন এই রোগটার নাম জানে। এখন যদি অনেকে সতর্ক হন। আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকও এই রোগে লন্ডনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

দল ক্ষমতায় থাকলেও তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি লন্ডনে কোন একটি উপলক্ষে গিয়ে হাসপাতালে আব্দুর রাজ্জাককে দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে নিউজটি পত্রিকায় ছাপা-মিডিয়ায় প্রকাশ বন্ধ করান।

অনেকে ঢালাও বোঝেন যারা মদ বেশি খান তাদের লিভার সিরোসিস হয়! সিনেমার কাহিনীতে অনেক জমিদার বা জমিদারপুত্র মদ খেতে খেতে লিভার সিরোসিস হয়ে মারা যান। আজকের যুগে ফ্যাটি লিভার থেকে শুরু করে নানা কারনে লিভার সিরোসিস হতে পারে।

খালেদার কী কারনে রোগটি হতে পারে তা তার চিকিৎসকরা ব্যাখ্যা করে বলেননি। অনেকের ধারনা তাঁর বয়স আর মন খারাপ অবস্থা থেকে নানান রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে। ক্ষমতায় আর বিলাস জীবনে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত মানুষটি ক্ষমতাহীন মন খারাপ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

গৃহপরিচারিকা ফাতেমা যে তার সঙ্গে জেল খেটেছে এটা লেখা থাকবে জেলখানার ডায়রিতে! জেলখানা আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে থাকাকালীন এই ডাক্তার সেই ডাক্তার দেখাবোনা করতে করতে তার অবস্থা জটিল হয়েছে।

আর্থাইটিসে বেঁকে গেছে হাত! ডাক্তারদের সঙ্গে ডাক্তারি করতে নেই। মির্জা ফখরুল উল্টো এর নাম দিয়েছেন স্লো পয়জনিং!

এখন খালেদা জিয়ার মতো এই কঠিন রোগে আক্রান্ত দেশে আরও কত লিভার সিরোসিসের রোগী আছেন, তারা দেশে চিকিৎসার সুযোগ পান কিনা, সে সামর্থ্য কয়জনের আছে তা বিএনপি অথবা দেশের কোন রাজনৈতিক দলও কোন দিন বলবেনা অথবা জানার-বলার চেষ্টা করবেনা।

আগে এসব কথা মেহনতী-শ্রমজীবী মানুষের রাজনীতি করা বামপন্থীরা অন্তত বলতো। এখন সেই রাজনৈতিক সংগঠন অথবা রাজনীতিকও নেই। বামমনাদের কেউ এখন আওয়ামী লীগ কেউ বিএনপি নেতাদের আজ্ঞাবহ ঘেটুপুত্র!

অনেকে মনে করেন সরকার হয়তো এক সময় বেগম জিয়াকে বিদেশে যেতে দেবে। কিন্তু শেষ সময়ে। বিদেশে খালেদা জিয়া চিকিৎসা পাবেননা। তার চিকিৎসা এখন কিডনি-লিভার প্রতিস্থাপন। দুটো প্রতিস্থাপন একসঙ্গে করতে হবে।

কিন্তু তিনি যে সব দেশে চিকিৎসার জন্যে যেতে চান সে সব দেশে নিকটজন ছাড়া ডোনার পাবার বিষয়ে তাদের দেশের আইনে আপত্তি আছে। তারেক বা খালেদা জিয়ার নিকটজন কেউ তাকে কিডনি-লিভার দেবেন এমন প্রতিজ্ঞা-সম্ভাবনার কথা কেউ বলেনি শোনা যায়নি।