নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচনের কঠিন পরিস্থিতিতে শাসকদলের দুই নেতা কাইজ্যাই করছেন! আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব সিদ্ধান্ত যে এই দলের নেতাকর্মীরা এখন আর চোখ বন্ধ করে মানেননা, সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচন আর নাসিক নির্বাচনের মনোনয়ন সেটিকে সামনে নিয়ে এসেছে!
বাস্তব পরিস্থিতি বলছে নাসিক নির্বাচনের মনোনয়নের আগে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত ছিলো নারায়নগঞ্জের বিবদমান দু’পক্ষকে ঢাকায় ডেকে এনে কথা বলা। শীর্ষ নেতৃত্ব হয়তো ভেবেছিলেন শেখ হাসিনা যাই বলবেন তা সবাই চোখ বন্ধ করে সবাই মেনে চলবেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।
জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ডাকে শামীম ওসমান ঢাকার বৈঠকে যাননি। ভোটের মাঠে শামীম অনুগতদের না দেখে নানক কমিটি একের পর এক হুংকার ছুঁড়েও লাভ হচ্ছিলোনা। সেলিম ওসমানের অনুগত ইউপি চেয়ারম্যানরা বিএনপির তৈমুর আলমের পক্ষে মাঠে নেমে যায়।
এরপর শামীম ওসমান অনুগত মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি ভেঙ্গে দেবার পর, পুলিশি একশন শুরু হলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শামীম ওসমান। র্যাব কিন্তু একবার ক্রসফায়ারের অনুমতি চেয়ে পায়নি। জনসভার মতো করে সংবাদ সম্মেলনে মাঠে নামলাম বললেও এমপি হিসাবে তিনি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেননা। সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য আওয়ামী লীগের ঐক্যকে সংহত করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান নাসিকের সামান্য পাঁচ লক্ষ ভোট-ভোটারের বিষয়কে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উচ্চারন করেছেন! আসলেইতো মাত্র পাঁচ-সাড়ে পাঁচ লাখ ভোটার। কিন্তু আসল সত্য এই পাঁচ লাখ ভোটারের মনও তার মতো জনপ্রিয় ব্যক্তি জয় করতে পারেননি।
এই পাঁচ-সাড়ে পাঁচ লাখ ভোটারের নির্বাচনেও তিনি সেলিনা হায়াত আইভির কাছে হেরেছেন। দ্বন্দ্বের সেই যে শুরু, ‘দিনে দিনে এর বাড়িয়াছে শুধু দেনা’! আইভির কাছে সেই হার যে শামীম ওসমান এখনও ভুলে যাননি, নির্বাচন উপলক্ষে তা আবার নতুন করে প্রকাশিত।
২০০৮ সালের যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় এসেছিল সেই নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। শেখ হাসিনার দেয়া নৌকা পেয়ে কবরী সরোয়ার সেই নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর থেকে যে সব নির্বাচনে তিনি এমপি, সেই নির্বাচনগুলো সম্পর্কে শামীম ওসমানও বিশদ জানেন।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান নারায়নগঞ্জে আওয়ামী লীগের উত্থান, বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি তার দাদা-পিতা-মাতার অবদান, এসবের বৃত্তান্ত নতুন করে উল্লেখ করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে তিনি যে কানাডায় চলে গিয়ে কষ্ট করেন, তাও বলেছেন।
সারা দুনিয়ায় যে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি তাদের ৯৯ শতাংশ বছরের পর বছর তেমন কষ্টই করেন। তখন একটি খামারের ট্র্যাক্টরে শামীম ওসমানের ছবি ছাপা হয়েছিল। তাতে লেখা হয়েছিল বিদেশে চাষাবাদ করছেন শামীম ওসমান। বিদেশে যারা চাষাবাদ করেন তারা গরিব কিসিমের লোক নন।
পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিশোধ নিতে বিয়ের পরপরই গৃহত্যাগ করেছিলেন শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমান। এসব সত্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের উত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্য নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রচারে কি জাতীয় পার্টিতে গিয়েছিলেন?
না কেউ নাসিম ওসমানকে আওয়ামী লীগ থেকে কখনও বের করে দিয়েছে? বা সেলিম ওসমান কী একই মিশনে জাতীয় পার্টিতে বাস করেন? এক ভাই আওয়ামী লীগ-এক ভাই জাতীয় পার্টি নীতি নিশ্চয় বঙ্গবন্ধু বা তার পিতা শামসুজ্জোহা-ভাষা সৈনিক মাতার স্বপ্ন ছিলোনা।
ভাগ্যিস শামীম ওসমানের ভক্তরা এই প্রশ্ন কখনো করেনা বা এই নীতি অনুসরন করেননা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই পরিবারের ভূমিকার জন্যে শেখ হাসিনা বরাবর তাদের প্রতি দূর্বল। আওয়ামী লীগের জন্যে এখনও তাদের মায়া-মমতার কমতি নেই। কিন্তু আখেরে কোথায় যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নারায়নগঞ্জ?
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রাপ্ত সেলিনা হায়াত আইভি ভোটের প্রয়োজনে হলেও দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা কেন করলেননা? না এন্টি শামীম ওসমান বা ওসমান পরিবার বিরোধী ভোটব্যাংক জয় করে করে নির্বাচনে জিতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন? এবার কিন্তু কঠিন হবে। কারন তিনি সরকারি দলের প্রার্থী।
মেগা প্রজেক্টের চাইতে চাল-আলু-পিয়াজের দাম ভোটের বাজারে প্রভাব ফেলে বেশি। আইভি কী বুঝে গেছেন যে সরকার এই নির্বাচনে হারতে চাইবেনা? অতএব তিনি জিতবেনই! সেভাবে জিতলে কিন্তু আইভির মৃত্যু হবে। ভোটের আগে তেমন ধারনার সৃষ্টি হলে ভোটাররা ভোট দিতে যাবেনা।