কি কাকতালীয়! তালিবানদের সর্বশষ ঘোষনার অনুসরনে গোলাপি বেলুন সাজিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ ঘোষনা দিলেন নারী তুমি এসে এখানে ঢোকো!
দেশে এখন আমলাদের অনেক ক্ষমতা বলা হয়। দিনের ভোট রাতে করার কান্ডটিও নাকি তাদের। তারা কোন রিক্স নিতে চাননি! এক সময়কার সিএসপি আমলাদের দাপট-ক্ষমতার কথা আমরা সেই ব্রিটিশ জমানার গল্প-কাহিনী পড়ে জানি। এখন অবশ্য অনেক ব্যতিক্রমও আছেন।
আমার পরিচিত অনেক চমৎকার তরুন আমলাও আছেন। যাদের মুখস্ত ধারনার আমলা বলাও যাবেনা। করোনার প্রথম দিকে তারা ঘাড়ে করে খাবারের বোঝা নিরন্নের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও এমন কিছু আমলা রয়ে গেছেন যারা শেখ হাসিনার নেতৃ্ত্বের দেশের প্রশাসনে থাকার অযোগ্য।
এক সময়কার ক্যাপ্টেন কক্সের নামানুসারের সৈকত নগরী কক্সবাজার এখন দেশের প্রধান পর্যটন নগরী। সাম্প্রতিক সময়ে এই শহরে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে তাতে মনে হয়েছে শহরটির প্রশাসনিক নেতৃত্ব নিয়ে সরকারের নতুন করে ভাবা উচিত।
দেশের প্রধান পর্যটন নগরীর প্রশাসন আর দশটা প্রশাসনের মতো হবেনা। পর্যটন শহরের নেতৃত্ব যারা দেবেন তাদের আলাদা কিছু অরিয়েন্টেশন দরকার। কিন্তু হঠাৎ করে কক্সবাজার প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের আচরন-তৎপরতায় ধারনা পাওয়া গেলো, মননে চিন্তায় তারা এখনও জুতা আবিষ্কারের যুগের বাসিন্দা!
জুতা আবিষ্কার কবিতার গল্পে আছে রাজার পায়ে যাতে ধুলি না লাগে সে জন্যে গোটা রাজ্য ঝাড়ু দেবার পরামর্শ দিয়েছিল গবেট মন্ত্রী! পরে পরামর্শ পাওয়া গেলো রাজার পা দুটি ঢেকে মুড়িয়ে দিলেইতো সমস্যা মিটে যায়। এভাবেই জুতা আবিষ্কারের সূত্রপাত।
স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ত অথবা ব্যর্থ ভূমিকার কারনে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজার যেন দিনে দিনে ঠগ-প্রতারক-সন্ত্রাসের নগরীতে পরিনত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চিহ্নিত হয়েছে শহরটির বেশিরভাগ হোটেল-রেষ্টুরেন্টের মালিক-কর্মচারীই ঠগ-প্রতারক-জোচ্চুর!
পর্যটকদের বাগে পেয়ে এরা সর্বশেষ পনেরশ টাকার হোটেল রূমের ভাড়া পাঁচ-ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। আলু ভর্তা-ডাল-ভাতের প্লেটের দাম নিয়েছে চার-পাঁচশ টাকা! যাতে এই পর্যটকরা সারাজীবন এই প্রতারনার অভিজ্ঞতা মনে রাখে আর তাদের গালি দেয়।
অথর্ব কক্সবাজার প্রশাসন এদের কোন প্রকারের একটা কেশও স্পর্শ-ছিঁড়তে পারেনি! এক নারী পর্যটককে গণধর্ষনের ঘটনা প্রকাশের পর জানা গেলো পর্যটন নগরীর ভেতরটা এখন কত অন্ধকার! র্যাব জানিয়েছে পর্যটন শহরটিতে আশিকের মতো ধর্ষকদের দস্যুবৃত্তির খবর!
যাদের নেশা-পেশাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল পর্যটকদের জিম্মি করে ধর্ষন-টাকা আদায়! আর এসবের দায় এড়াতে কক্সবাজারের পুলিশ প্রশাসন প্রচারের চেষ্টা করলো, নারী পর্যটক ভালোনা, তাই তাকে ধর্ষন করাই যায়! আর র্যাব জানিয়েছে কক্সবাজারের চলতি পরিস্থিতি স্থানীয় পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা-ব্যর্থতা সম্পর্কিত।
কক্সবাজারে এখন মামুনুর রশীদ নামের একজন জেলা প্রশাসক আছেন। তার কুষ্ঠি আমাদের জানা নেই। তবে তিনি তার সাম্প্রতিক এক কাজে প্রমান দিয়েছেন, শেখ হাসিনার প্রশাসনে নয়, আফগানিস্তানের তালিবান প্রশাসনে ভালো করতেন! তালিবানদের মতো আলখেল্লা পোশাকটা তারও দরকার।
পুরুষতান্দ্রিক জবরদস্তির দেশ সৌদি আরবের শপিং মলগুলোতে নারী ক্রেতাদের জন্যে আলাদা এলাকা রয়েছে। সে এলাকায় শুধু নারী ক্রেতারাই প্রবেশ-কেনাকাটা করতে পারে। তাদের সঙ্গে যেতে থাকতে পারে শিশু সন্তানরা।
হজে পুরুষ সঙ্গী হিসাবে একদা ফালুর যাতায়াত নিয়ে এই বদ্বীপটায় কত কানাঘুঁষা অনুগল্পের সৃষ্টি হয়েছে। একদা একটি পঞ্চাশ সিসির মোটর সাইকেল নিয়ে যিনি মিছিলকে অনুসরন করতেন তিনি এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। কয়েকশ সাংবাদিক পোষেন।
গুলশানের ফিরোজা বাড়িটি পছন্দ করা সাজানোও হয়েছে ফালুর নেতৃত্বে। দেশে-বিদেশে তার নিজস্ব টিভি চ্যানেল এনটিভি সহ নানান ব্যবসা চালু আছে। কোকোর কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বেশি কান্না করার ছবি আছে ফালুর।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ শেখ হাসিনা টানা ক্ষমতায় থাকায় গ্রেফতার এড়াতে মির্জা ফখরুলদের শ্রদ্ধার উচ্চারনের ফালু সাহেবকে এই কঠিন সময়ে থাকতে হচ্ছে দুবাইতে। ব্যয়বহুল এভার কেয়ার হাসপাতালের বিল সহ খরচাপাতি কী সেখান থেকে আসছে?
আফগানিস্তানের তালিবান প্রশাসন ক্ষমতায় ফেরার পর নারীর বিরুদ্ধে একের পর এক সিদ্ধান্ত দিচ্ছে। বলে দিয়েছে নারী কর্মকর্তাদের আপাতত অফিসে কর্মস্থলে আসতে হবেনা। তালিবানরা সর্বশেষ জানিয়েছে পুরুষ সঙ্গী ছাড়া নারীর দূরে কোথাও যাতায়াত নিষিদ্ধ!
কাবুলিওয়ালার দেশে একবিংশ শতকে আবার অবরোধবাসিনী তুমি নারী! কি কাকতালীয়! তালিবানদের সর্বশষ ঘোষনার অনুসরনে গোলাপি বেলুন সাজিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ ঘোষনা দিলেন নারী তুমি এসে এখানে ঢোকো! এটা তোমাদের জন্য সংরক্ষিত সমুদ্র সৈকত!
দেশে এখন নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন। স্পীকার-বিরোধীদলের নেত্রী সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে নারী। আর এই দেশের প্রধান পর্যটন নগরীর জেলা প্রশাসক তার কর্তৃ্ত্বে থাকা জেলা শহর নারীর জন্য অনিরাপদ চিহ্নিত করে তাদের জন্যে নিরাপদ ও সংরক্ষিত এলাকার আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা করছিলেন!
যেন কক্সবাজারের বাকি এলাকা নারীর জন্যে অনিরাপদ! এরপর কী শেখ হাসিনা কক্সবাজার গেলে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ তাঁকে সেখানে ঢোকাতেন? স্পীকার-বিরোধীদলের নেত্রী সহ সব নারী কক্সবাজার গেলে ঢুকতে হতো সংরক্ষিত সৈকত নামের খোয়াড়ে!
ভালো খবর হচ্ছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদের এই বলদ সুলভ বলদামির সিদ্ধান্ত কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। হয়তো নির্দেশটি এসেছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। কারন জেলা প্রশাসক বলদ হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাতো এই বুদ্ধিতে দেশ চালাননা।
কক্সবাজারের বলদ জ্ঞান সম্পন্ন জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার-টুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা এদের দ্রুত কক্সবাজার থেকে প্রত্যাহার করা দরকার। কারন তারা তাদের মেধা-যোগ্যতার যথেষ্ট প্রমান এরমাঝে দিয়ে ফেলেছেন। একটি পর্যটন শহরের জন্যে তারা অযোগ্য-অনুপোযুক্ত। তালিবানি জেলা প্রশাসককে আফগানিস্তানে রপ্তানি করা দরকার।
শেখ হাসিনার গত ১২ বছরের শাসনে দেশের জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে তাদের নিয়ে এমন সব খবর বেরোয় তখন মনে হয় তারা শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ করে দিচ্ছেন কিনা।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা মধ্যরাতে সাংবাদিক পিটিয়ে তার নামে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। করোনার প্রথম টেউ এর সময় মাস্ক না পরায় যশোরের মনিরামপুরের এসিল্যান্ড সাইয়মো হাসান দু’জন বয়স্ক নাগরিককে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঘণ্য নিষ্ঠুরতার ছবিটি প্রকাশের পর সেই এসিল্যান্ডকে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। বলদ বুদ্ধির সর্বশেষ দৃষ্টান্ত রেখেছেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন! এমভি অভিযান-দশ লঞ্চে মর্মন্তুদ অগ্নি দূর্ঘটনার সময় বিপন্ন তিনশ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন সাহসী মানবিক মানুষ এক ট্রলার চালক মিলন খান।
পুলিশ সুপার মিলন খানকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন! তিনশ মানুষের জীবন বাঁচানোর পুরস্কার পাঁচ হাজার টাকা! একশ ডলারও নয়! সে রাতে মিলন খান যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন তাতে তাকে পঞ্চাশ লাখ টাকা পুরস্কার দিলেও তাঁর কোনদিন মূল্যশোধ হবেনা।
কিন্তু পুলিশ সুপারের হয়তো মনে হয়েছে মিলন খান যেহেতু ট্রলার চালায়, সে একটা গরিব ফকিন্নির পুত, তাই তাকে পাঁচ হাজার টাকা দেয়াই যথেষ্ট! মিলন খানকে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দিতে ঝালকাঠির এসপি ফাতিহা ইয়াসমিনকে কেউ হাতে পায়ে ধরেনি।
কিন্তু এই পাঁচ হাজার টাকা দেয়া নিয়ে কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা মিলে তারা যে ঘৃণ্য ছবি তুলে মিডিয়াকে দিয়েছেন ছবি দেখে মনে হচ্ছিল ফকিন্নিত পুত-ঝি তারাই। প্রশাসনের সবাই যার যার ব্যক্তিত্ব-মান-সম্মান বজায় রেখে না চললে পাব্লিকতো তাদের বলদ-বলদামি এসব বলবেই। এসব বলদ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ চলবেনা।