প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

তোয়াব ভাইর জন্য সবাই প্রার্থনা করুন

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ১ অক্টোবর ২০২২

তোয়াব ভাইর জন্য সবাই প্রার্থনা করুন

আমার এখন দিনরাতের বেশিরভাগ সময় অমর্ত্য ফাউন্ডেশনের চ্যারিটি কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন একটু সহায়তা সমর্থনের আশায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে যুক্তিসঙ্গত মনে হলে সহায়তার জন্য ডোনেশন জোগাড় করতে হয়।

আমাদের এই ডোনেশন জোগাড়ের মূল মাধ্যম ফেসবুক। সব ডোনেশন যায় ঢাকা কেন্দ্রে। সেখান থেকে সহায়তা গ্রহনকারীর কাছে সহায়তা যায়। এরজন্যে আমার ফেসবুক আইডিও সক্রিয় থাকে সর্বক্ষন। আমাদের জনকন্ঠ পরিবারের বর্তমান-সাবেক সদস্যদের একটি সচল গ্রুপ আছে জনকন্ঠ ক্লাব।

এখানে পত্রিকাটির সাবেক কর্মীরাই বেশি সক্রিয়। পহেলা অক্টোবর সিডনি সময় ভোর ৪ টা ২৩ মিনিটে আমাদের সহকর্মী তাপস রায়হান গ্রুপে জানান ইউনাইটেড হাসপাতালে তোয়াব ভাইকে লাইভ সাপোর্টে নেয়া হচ্ছে। খবরটা পড়ে ভেতরটা কেঁপে ওঠে ভয়ে। কারন তোয়াব খানের বয়স।

অনেকদিন তোয়াব ভাইর খবর নেয়া হয়নি। আমি অবশ্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর খবর নিয়ে অভ্যস্ত। শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় সরাসরি ফোন করে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে একধরনের জড়তা কাজ করে। অমর্ত্য ফাউন্ডেশনের গরিবের খাবারগুলোতে আমরা তোয়াব ভাই’র জন্মদিন পালন করি।

অসুস্থতায় রোগমুক্তির জন্য আমাদের মেহমানরা তাঁর জন্য দোয়া করেন। গত কুরবানির ঈদে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গরিবের কুরবানি দেয়া হয়েছে। গরিবের কুরবানি জনকন্ঠের চালু করা কনসেপ্ট। দেশের চিহ্নিত দরিদ্র গ্রামে এই কুরবানির মাংসের পুরোটা বিলি করা হয় গরিবদের মাঝে।

এবার গাজিপুরের অমর্ত্য ফাউন্ডেশনের গরিবের হেঁসেলের কুরবানিতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে কুরবানি দিয়েছি। তাঁর পাশাপাশি তোয়াব ভাই, প্রয়াত দুই সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন মোস্তান, মিনার মাহমুদের নামেও পশু কুরবানি দেয়া হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা তোয়াব ভাই জাতির পিতারও প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। তাঁর নামে দূর থেকে পশু কুরবানির আয়োজন নিয়ে তোয়াব ভাইর সঙ্গে আলাপ করা বা প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করিনি। এসব মন থেকে ভালোবাসার চর্চা। তোয়াব ভাইর খবর জেনে ভোলার অমর্ত্য মসজিদ ও খাবার ঘরগুলোয় দোয়া করতে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।

জনকন্ঠে তোয়াব ভাইর কাছে আমার সব আবদার পাশ করিয়ে আনতেন আলী হাবিব ভাই। জনকন্ঠ তোয়াব ভাইর সৃষ্টি। আবার জনকন্ঠে তোয়াব ভাইকে দূর্বল করে দিতে আলী হাবিব ভাইকে সরানো দরকার ছিল। কিন্তু তোয়াব ভাইর সঙ্গ থেকে আলী হাবিব ভাইকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি।

প্রিয় তোয়াব ভাই’র সঙ্গে তোলা শেষ ছবি সহ আলী হাবিব ভাই’র ফেসবুকের লেখাটা পড়ে চোখ ভিজে আসে। আলী হাবিব ভাই লিখেছেনঃ “৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার গিয়েছিলাম তোয়াব ভাইয়ের গুলশানের বাসায়। কিছুক্ষণ বাদেই এলেন আশীষ-উর-রহমান শুভ। উঠে আসার আগে শুভ বললেন, একটা ছবি তুলে তুলে দেন হাবিব ভাই। তোয়াব ভাই’র ছোট ভাই বাচ্চু ভাইয়ের হাতে ফোনটা দিয়ে বললাম, আমিও দাঁড়াই পাশে।

১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার অফিস থেকে বের হতে দেরি হলো। বাসার কাছে যখন এসেছি, বাচ্চু ভাই ফোন দিলেন। বললেন, 'ভাইয়া বলছিল আলী হাবিব আসতে পারে। দেরি করছে কেন?' পরদিন ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় তোয়াব ভাই নিজেই ফোন দিলেন। বললেন, ' খবর কী তোমার।'

 

জানালাম, একটু ব্যস্ততা আছে। খুব বেশি জরুরি কথা থাকলে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আসি। খুব জরুরি না হলে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর)। তোয়াব ভাই বললেন, 'তাহলে শুক্রবার হাতে সময় নিয়ে এসো। কথা আছে।' ১৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকেই তোয়াব ভাই হাসপাতালে। কথা ছিল ছাড়া পেলে সেদিনই যাব।

 

১১ দিন হয়ে গেল। আজ গিয়েছিলাম ইউনাইটেড হাসপাতালে। আইসিআউ'র ১০ নম্বর বিছানায় নির্বাক শুয়ে আছেন। বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে ৯টা। বাচ্চু ভাই ফোন করে জানালেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যেকোনো সময় লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হতে পারে।

 

তোয়াব ভাই গত ৩০ বছর ধরে আমার জীবনের সঙ্গে, আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। আমার অভিভাবক। কী করবো?”আজ সকালে আলী হাবিব ভাই’র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্না থামাতে পারিনা। আইসিইউতে তোয়াব ভাইর শারিরিক জটিলতা সমূহ শুনলাম। অনেকক্ষন ডাকলে চোখ মেলে তাকান।

 

আবার চোখ বন্ধ করেন। কথা বলতে পারেননা। ভোলার অমর্ত্য মসজিদ, কুলাউড়ার উন্দাল, গাজীপুরের অমর্ত্য ফাউন্ডেশন গরিবের হেঁসেলে তোয়াব ভাইর জন্যে দোয়ার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। আপনারাও প্রার্থনা করুন। এই মহান সংবাদপত্র ব্যক্তিত্বের জন্যে যার যার দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করুন।