বিএনপি সত্যিকারের হতভাগ্যদের দল! এরজন্যে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে একটা শোকও জানাতে পারেনি! একুশের প্রভাতফেরীতে তারাওতো গায় ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’! না তারা আজকাল এটা আর গায়না! অথবা আগামীতে আর গাইবেনা!
দেশে যত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে, দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মতো করে উল্লাস করেছে! কিন্তু ‘স্বাধীনতার ঘোষকের দল’ বিএনপির নেতাকর্মীদের তখনও আদিষ্ট হয়ে মুখে তালা! কোন প্রতিক্রিয়া দেয়া যাবেনা! কি দূর্ভাগ্য দলটার নেতাকর্মীদের!
এরজন্যে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের মূলধারা হয়েও দলটি দেশের মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ দল। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চালাকি চলেনা। চালাকি করে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীকে খুশি করতে পারে। এমন জামায়াত খুশিকরন তাদের চলতেই থাকুক।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী দেশের এবং বাংলা সাহিত্যের একজনই ছিলেন। বিএনপি সমর্থক যত সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী সব মিলিয়েও একজন আব্দুল গাফফার চৌধুরী হবেননা। মোনায়েম খান বুদ্ধিজীবীদের বলতেন, আপনারা একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখতে পারেননা!
খালেদা জিয়া কী তাদের কখনও এমন কিছু কখনও বলেছেন! ‘আপনারা একটা ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানোর মতো গান লিখতে পারেননা, যেটা আমরা বাংলাদেশী জাতয়তাবাদীরা প্রভাত ফেরীতে গাইতাম!’ সেটাতো সম্ভব না কোনদিন। সামরিক শাসনের পেট থেকে গণতন্ত্র বের করার কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নেই।
আওয়ামী লীগের এই সরকারের কত সমস্যা আছে। তাও আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মতো করে কেউ কখনও লিখতে পারেনি। শেখ হাসিনাকে শাসন করার সোহাগ করার সেই বিশাল মানুষটিই হারিয়ে গেলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের ভুল-ক্রটিও কাঠখোট্টা তুলে ধরতেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী। আওয়ামী লীগ-বিএনপির এই প্রজন্ম তাঁর সেই দৈনিক জনপদ পত্রিকাটির কথা জানেনা।
তাঁর পরে এমন শুধু আরেকজন শুধু আছেন তোয়াব খান। তিনি নিজে এখন সেভাবে লিখেননা। লেখান। তোয়াব খানের সর্বশেষ জন্মদিনে আব্দুল গাফফার চৌধুরী তাঁকে শেষ তারকা উল্লেখ করে লিখেছিলেন। তিনিও চলে গেলেন। গাফফার চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে শোকার্ত তোয়াব খান কথা বলা আরও কমিয়ে দিয়েছেন।
আব্দুল গাফফার চৌধুরীর চির বিদায়ের পর প্রথম আলোর ভূমিকা চোখে পড়ছে। প্রথম আলো আমাদের প্রিয় একটি পত্রিকা। মিডিয়া ব্যবসাও ভালো বুঝে। সফল পত্রিকার ব্যবসাও ভালো বুঝতে হয়। গণজাগরণ মঞ্চের গণজাগরণের সঙ্গে পথ হাঁটছিল প্রথম আলো।
প্রতিদিন ভালো সব রিপোর্ট-ছবি-লেখা ছাপা হচ্ছিল। এরপর একদিন হঠাৎ ইউটার্ন! মনে পড়ে? শ্লোগান কন্যার চরিত্র হননের অপচেষ্টা হয়! রাজাকাররা কিন্তু এতে ভীষন খুশি হয়। ভরসা পায়। এরপর সবাই রাজাকারদের খুশি করতে নেমে পড়েন!
আব্দুল গাফফার চৌধুরী এক সময় প্রথম আলোয় লিখতেন। হঠাৎ তাঁর সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। একজন সেনা প্রধানের সঙ্গে প্রথম আলো তখন সম্পর্ক উন্নয়নের অথবা তাকে আলোকিত করার নীতি নেয়। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর প্রথম আলোকে দেয়া শেষ লেখাটা ছিল এর উল্টো।
সে লেখাটি পরে হুবহু জনকন্ঠে ছাপা হয়। সেই ঘটনার পর এক যুগের বেশি সময় বেঁচেছিলেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী। সে ঘটনাটি নিয়ে তাদের কী কোন আক্ষেপ কাজ করে? না আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে ধারনের ক্ষমতা প্রথম আলোর ছিলোনা? অধ্যাপক জাফর ইকবালের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।
আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুর পর সবচেয়ে ভালো কান্না করছে কিন্তু দেশের প্রধান পাঠক প্রিয় পত্রিকা প্রথম আলো। কভারেজ-লেখা সবকিছু ভালো হচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চের অভিজ্ঞতা ভাবলে ভয়ও করে। এটাও হবে কিন্তু। স্মৃতি যাদের বিশ্বাসঘাতকতা করেনা তাদের অনেক কিছু জানা আছে।
লেখালেখির কারনেই আপনি মহীরুহ প্রিয় গাফফার ভাই। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’র কালজয়ী আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খাটো করে দেখাতে গেলে সেই খাটো হবে। ভালো থাকবেন।