এখন যদি বাংলাদেশের কোন টিভি দেখেন, পত্রিকা পড়েন কিছু শব্দ শুনে পড়ে আপনার কান জ্বালাপালা হবে! ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিজম, ফ্যাসিস্ট! যারা এসব বলছেন, লিখছেন তাদের বলার ভঙ্গি, গলার আওয়াজ, লেখার ধরন দেখেই বুঝবেন তারা নিজেরাই একেকটা ফ্যাসিস্ট! ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিজম তাদের মনের ভিতর!
দেশে এখন প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী প্রধান, অথবা অমুক অমুক ছাত্র বা রাজনৈতিক নেতা, টকশোর বিশেষ সম্মানী পাওয়া বক্তা বা ইউটিউবের লাইক ভিউ শেয়ার খাদক সবাই একেকজন ছোটবড় ফ্যাসিস্ট! অমুককে এই করতে দেবোনা সেই করতে দেবোনা এসবইতো ফ্যাসিবাদ, এসবইতো ফ্যাসিজম! এসব এজেন্সি আপনাদের কে দিয়েছে? ফ্যাসিস্টরাইতো নিজে নিজে সব এজেন্সির কর্ণধার মনে করে।
ডক্টর ইউনুস বা জেনারেল ওয়াকার এদের মধ্যে আমিত্ব বেশি। আমরা নয়। এটাই ফ্যাসিজম তৈরি করে। ৫ আগষ্ট যদি জেনারেল ওয়াকার সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করতেন, কেউ তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতোনা। যে অবস্থা দেশে তৈরি করা হয়েছিল, শেখ রেহানা, জয়, পুতুলকে বুঝিয়ে যদি সেদিন শেখ হাসিনাকে রাজি না করাতেন, তাহলে শেখ হাসিনা রেহানার সেদিন মৃত্যুও হতে পারতো। এ অর্থে সেনা প্রধান সেদিন শেখ হাসিনা শেখ রেহানার জীবন রক্ষা করে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার, বিমানে তাদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দিয়েছেন।
আজ যারা শেখ হাসিনার পালানোর ভাষ্য দেন, তারা আসলে তাঁর মৃত্যু কামনা করেছিলেন। শেখ হাসিনা এখানে মৃত্যুতে রাজি ছিলেন। দেশের মাটিতে মৃত্যুর পর পিতা জাতির জনক মুজিবের বুকে ঠাঁই চেয়েছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। তার প্রিয় আদরের দুলালি হাসু।
এই যে সেনা প্রধান তাঁর জীবন রক্ষা করেছেন, এরজন্য কী একদিন তাঁরও বিচার দাবি করা হবে? হতেও পারে। তবে এভাবে দেশত্যাগে শেখ হাসিনাকে বাধ্য করায় গোটা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি, কোটি কোটি নেতাকর্মী, সমর্থক জীবন সম্পদকে বিপদগ্রস্ত করা হয়েছে।
আমেরিকায় ক্লিন্টনের অনুষ্ঠানে ডক্টর ইউনুস বলে ফেলেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার কথা। যেটি তিনি প্যারিসে বসে মনিটর করছিলেন। ছাত্ররা তাকে অনুরোধ করেছে আর তিনি ফেরেশতার মতো রাজি হয়ে গেছেন, অমুক অমুককে নিয়ে সরকার গঠন হয়ে গেছে এসব আসমানি ওহীতে হয়ে যায়নি। ইউনুস যেটা বলেছেন হঠাৎই চটজলদি হয়ে যায়নি। ঢাকায় ফিরে বিমান বন্দরে ইউনুস যে বৈঠক করেছেন সেখানে তার পরিকল্পনা হোম ওয়ার্ক সমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে। এর আগে জেনারেল ওয়াকার তাদের মতো করে সরকার গঠনের বৈঠক শুরু করছিলেন। তাকে থামাতে ছাত্রদের দিয়ে বলানো হয়, সরকার গঠনের রূপরেখা তারা দেবে।
ইউনুসগং এর ফ্যাসিবাদের প্রথম প্রকাশ্য শিকার উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব:) সাখাওয়াত হোসেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অনিবার্য ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে তিনি ইউনুসগং এর ফ্যাসিজমের শিকার হয়ে পদ গুরুত্ব হারান। জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল, ১৫ আগষ্ট কাউকে ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বারে ঢুকতে না দেয়া, সেদিন হলে হলে গানবাজনার আয়োজন এসবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট ইউনুসগং তাদের জাত চিনিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সহ চৌদ্দ দলীয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির রাজনৈতিক দলগুলোকে সমূলে উৎখাতের তাদের ফ্যাসিবাদী কার্যক্রম চলমান আছে।
ক্ষমতার প্রায় দুই মাসেও ইউনুস সরকার দেশে সিভিল প্রশাসনের স্বাভাবিক শাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। কারন যোগ্য ব্যক্তির ক্ষমতায়ন নয়, সরকারের মূল চাওয়াটা হচ্ছে লোকটি এন্টি আওয়ামী লীগ কীনা! অমুক অমুককে চেনেন, বা অমুকের ভাইবোন তার সঙ্গে পড়েছেন বা কাজ করেছেন এসব হলো গিয়ে এদের যোগ্যতা বিবেচনার মানদন্ড! সিভিল প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে। তবু দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। যার যা কাজ। ভয়েস অব আমেরিকাকে ইউনুস বলেছেন, ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার সেনাবাহিনী চেয়ে নিয়েছে!
উল্টো এখানে উত্থান ঘটেছে ধর্মীয় জঙ্গি অপশক্তির! নারীর বিরুদ্ধে দেশের সেক্যুলার মুল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এই অপশক্তি! গ্রামীন ব্যাংক বা এনজিও সংগঠনগুলোর মাধ্যমে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের যে দাবি করা হচ্ছিল তা আজ বিপন্ন প্রায়। এমনকি পোশাক কারখানায়ও নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে আনার দাবি উঠছে! প্রশ্ন তোলা হচ্ছে নারীর পোশাক স্বাধীনতা নিয়ে! শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জামায়াত শিবির! চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিএনপি। ধর্মীয় কটুক্তির অভিযোগ তুলে পুলিশের কাছ থেকে লোকজনকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে মারার নিন্দা করে সরকার কোন বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি। জাতিসংঘের বক্তৃতায়ও তা এড়িয়ে গেছেন। ৫ আগষ্টের পর থেকে যত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারের পক্ষে দাঁড়ায়নি এই ফ্যাসিস্ট সরকার। উল্টো বলার চেষ্টা করে আসছে অনেক বেশি মানুষ মারা যাবার কথা ছিল! কম মরেছে! আদালতে যত আটক ব্যক্তির ওপর হামলা হয়েছে, কোন একজন হামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি এই ফ্যাসিস্ট সরকার। একদিন এসব ঘটনাও আইনের আওতায় আসবে।
সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইউনুস সরকারের যে মতের অমিল যে চলছে তা প্রকাশ পেয়েছে সরকারের সময়সীমা নিয়ে দেয়া বক্তব্যে! রয়টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তিনি সরকারকে সহায়তা করবেন। এই বক্তব্যের পর অনেকে বলা শুরু করেছেন সরকারের মেয়াদ ১৮ মাস! এটিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি ইউনুস সরকার!
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, সংস্কার শেষ হবার পর ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে! ভয়েস অব আমেরিকার সাথে সাক্ষাৎকারে ইউনুসকে মনে হলো বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত! তিনি সেখানে বলেছেন, সরকারের মেয়াদ কতদিনের হবে তা সরকার ঠিক করবে। অন্য কেউ নয়। এভাবে ইউনুস তাঁর মনোভাব জানিয়ে দিলেন জেনারেল ওয়াকারকে। এখন প্রশ্ন এসেছে ১৮ মাস পরে কী তাহলে সেনাবাহিনী বা সেনা প্রধান ইউনুস সরকারকে সহাযোগিতা করবেনা? ১৮ মাস আসতে আসতে দেশে অনেক ঘটনা ঘটবে। আপাতত জানা গেলো, সেনা প্রধানের কথায় ইউনুস রাজি না
যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত নিষিদ্ধের আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে ফ্যাসিবাদী হিসাবে দেখেছেন ইউনুস সরকারের আইন উপদেষ্টা! আর রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে যে কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছেননা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মানেই গ্রেফতার বা পিটিয়ে মেরে ফেলা এসব খুব গণতান্ত্রিক আচরন হচ্ছে, তাইনা।
১/১১ এর আইনশৃংখলা রক্ষার সঙ্গে জড়িতরা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার না করার শর্তে টাকা নেয়া শুরু করেছিল! এমন ঘটনা ইউনুস সরকারের দেশে আবার ঘটতে শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছে এমন ঘটনার খবর। কারন পুলিশ বা প্রশাসন আপনি পাল্টেছেন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়। এন্টি আওয়ামী লীগ দেখে দেখে। এভাবে দেশ এখন নতুন ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিজমের দিকে ধাবমান। মিডিয়ার চলতি হাওয়ারপন্থী বুদ্ধিমানরাও নব্য এই ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিজমের সহযোগী। এদের সম্মিলিত অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই দেশবাসীর আশ্রয় হিসাবে ঘুরে দাঁড়াবে নতুন আওয়ামী লীগ।
Whatsup: +61413871137