প্রিয় প্রজন্ম || Priyo Projonmo

দেশ স্বাধীন করা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আবার নিখোঁজ

ফজলুল বারী

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশ স্বাধীন করা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আবার নিখোঁজ

একমাস ধরে দেশে মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিখোঁজ! অনির্বাচিত সরকারের উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহতদের শোক জানাতে গিয়ে আবেগ সম্বরন করতে পারেননি। কিনতু মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের কথা উচ্চারনই করলেননা! এটাই তার সরকারের রাজনৈতিক চরিত্র! এদের গোলাম আযমের ছেলে জাতীয় সংগীত পাল্টানোর দাবি তুলেছে!

মূলত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আপত্তি আন্দোলন থেকেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সূচনা এবং সরকারের ক্ষমতাচ্যুতি। এই জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের মুক্তিযুদ্ধ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়াদি নিয়ে আবেগ ভালোবাসা নেই। তারা ভেবেছে এই কোটার কারনে তাদের ঘুষের চাকরি কম হচ্ছে। ছাত্রদের সরল আন্দোলনের ভিতরে ঢুকে জঙ্গিরা খুনোখুনি, পুলিশকে উত্যক্ত, বেপরোয়া করে ফায়দা হাসিলে সফল হয়েছে। সবাই শুধু এত লাশ এত লাশ করে হাহাকার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি বিরোধীদের মাধ্যমে এসব লাশ কিভাবে উৎপাদিত তা নিয়ে কেউ ভাবেননি!

অত:পর তাদের আগষ্টের সাফল্যে দেখা জানা গেল এরা কারা! সারাদেশে বঙ্গবন্ধুর সব ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের যেখানে যত স্মারক সব অতিদ্রুত ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে! আক্রান্ত হয়েছেন বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধারাও। যাদের বেশিরভাগ এখন জীবন সায়াহ্নে। মরার আগে বড় খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে গেলেন। শেখ হাসিনা সরকারের মাধ্যমে বানানো তাদের বাড়ি বীর নিবাস সমূহ ভেংগে ফেলা হয়েছে! এমন সব অভাবিত অকল্পনীয় ঘটনা দেখার জানার জন্য দেশবাসী প্রস্তুত ছিলেন না।

আগষ্টই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরিরের মিছিল বেরিয়ে গেলো! জামায়াত সেনা প্রধানের দাওয়াত পেলো সবার আগে। একদা শহীদ জননীকে আম্মা ডাকা আইন উপদেষ্টা জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বললেন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ত স্বচ্ছ ছিলোনা। আপনাদের নিয়ত যখন এত স্বচ্ছ বাংলাদেশের জন্ম বিরোধিতাকারী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলেন না কেনো? মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজ বিপন্নবোধ করছেন। তাদের মেরে রক্তাক্ত করার ছবি প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে!

মূলধারার মিডিয়া এসব দূর্ভাগ্যের ঘটনা এড়িয়ে গেছে। সবার মুখে শুধু কলরব দ্বিতীয় স্বাধীনতা দ্বিতীয় স্বাধীনতা! প্রথম স্বাধীনতাকে নিখোঁজ করে দিয়ে কথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা নিয়ে এমন গদগদ! একমাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী জেড আই খান পান্না এর বিরোধিতা করে বলেছেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। একটী দেশের স্বাধীনতা একবারই হয়।

সবাই দেখলো কথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা মানে অরাজক এক পরিস্থিতি। ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার বাড়ি যেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার! ছয় দফা, এগার দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে যে বাড়ি থেকে স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়েছে, সেটিকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে! অথচ পচাত্তরের খুনিরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করলেও এই বাড়ির কোন ক্ষতি করে নাই। যা করেছে কথিত এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাওয়ালারা!

তাদের কথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা মানে শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানো! জোর করে অটোপাস আদায়! শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি! কথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার নেতাদের আর পড়াশুনায় মন নেই। সেশনজট বাড়ছে। স্কুলের পাঠ্য পুস্তক থেকেও বংগবন্ধুকে হটানোর কাজ শুরু হয়েছে। এবার বছরের শুরুতে বাচ্চারা বই পাবেনা।

চাকরির জন্য আন্দোলন হলেও আন্দোলনকারীদের মন এখন রাজনীতিতে! প্রতিদিনের বক্তব্যের লাইন এখন এখন এরে খায়াম তারে খায়াম! সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনই তাদের নিয়ে অনেক কুৎসা রটানো হয়! নেতারা দেশ সফরে বেরিয়ে বুঝছেন বিএনপি তাদের রাজনৈতিক উদ্যোগে অসুখী। দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে।

জাতির পিতাকে হত্যার দিন পনের আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করেছে ইউনুস সরকার। পনের আগষ্ট ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার বাড়িটি এমনভাবে ঘিরে রাখা হয় যেন কেউ শোক জানাতে যেতে না পারে। সেই বাড়িতে শোক জানাতে যাচ্ছেন সন্দেহে লোকজনকে পিটিয়ে বিবস্ত্র করা হয়েছে। সেখানে ভাংগা হয়েছে কাদের সিদ্দিকীর গাড়ি! রোকেয়া প্রাচীকে পেটানো হয়েছে! এরপর কী আর সন্দেহ জাগে কারা এখন চেপে বসেছেন দেশ শাসনের!

পচাত্তরের পনের আগষ্টের পর হেনস্থার ভয়ে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে গোপন রাখতেন! এখন আবার দেশে তেমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে! একাত্তরে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষে যারা সরব ছিল তাদের রাজনীতির আজ জয়জয়কার! এই বাংলাদেশ আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নয়।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টা রবিবার বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যারা চাকরি পেয়েছে তাদের তালিকা করা হবে! উপদেষ্টার উচ্চারনে কেমন জানি তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সুর! যা ভুল বার্তা দেবে। অথচ তিনিওতো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একাত্তরে কোন একজন মুক্তিযোদ্ধাও কোটা বা কোনকিছুর আশায় জীবন দিতে যুদ্ধে যায়নি। কোন কিছুর আশায় জীবন দেবার যুদ্ধে যাওয়া যায়না। যুদ্ধ শেষে অনেকে সার্টিফিকেটও নেননি।

দেশ স্বাধীন হবার পর উপদেষ্টার মতো শিক্ষিত চালাক চতুর বা বাহিনীর সদস্য মুক্তিযোদ্ধারা চাকরি প্রমোশন সহ নানা কিছু বাগিয়ে নিয়েছেন। কৃষক শ্রমিক মুটে মজুর মুক্তিযোদ্ধারাই সমস্যায় পড়ে যান। তাদের জন্যেই চালু করা হয় কোটা পদ্ধতি। জিয়া, এরশাদ এরা কোটার পরিমান বাড়িয়ে মুক্তি মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংখ্যা বাড়িয়েছেন। এরাই আন্দোলনের সময় উল্টো কোটার বিরোধিতা করে বক্তব্য দিলে মুক্তিযোদ্ধারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা দেশে এখন একটি গালির নাম!

শেখ হাসিনার সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ২০ হাজার টাকা করা সহ যত সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছেন তা জিয়া এরশাদ খালেদা জিয়ার আমলে কেউ চিন্তাও করেনি। অরাজকতা দেখে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার পর মুক্তিযোদ্ধারাও আত্মগোপন করেছেন। একাত্তরে বিজয় অর্জনের পর স্বাধীনতা বিরোধী সবাই পালিয়েছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে এসে ঘটলো উল্টো ঘটনা! দেশে আবার একাত্তর বিরোধীদের জয় জয়কার! যারা এখন পনের আগষ্ট জাতির পিতার হত্যার দিনে শোকের পরিবর্তে করেছে লুঙ্গি ড্যান্স!

রংপুরে আবু সাঈদকে বীর শ্রেষ্ঠ ঘোষনা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে তার কবরে। স্বাধীনতার পর সীমিত কয়েকজনকে বীর শ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়া হয়। যাদের সবাই ছিলেন সামরিক বাহিনীর সদস্য। কথিত দ্বিতীয় স্বাধীনতাওযালাদের অরাজকতা রুখতে হবে। তাদের পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগষ্ট। ২৬ মার্চ নয়।

[email protected]

Whatsup: +413 871 137