আমি দীর্ঘদিন ধরে যে কথাটি বলে লিখে আসছি তাহলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল মূলত দুটো। আওয়ামী লীগ এবং এন্টি আওয়ামী লীগ। যেমন শিখরা বিশ্বাস করে মানব জাতি দু’ভাগে বিভক্ত! শিখ ও অশিখ! তারা বিশ্বাস করে পৃথিবীতে প্রতিটি মানব শিশু শিখ হিসাবে জন্ম নেয়! চুল কাটার পর তারা অশিখ হয়ে যায়!
ডক্টর ইউনুস, আনু মোহাম্মদ, সিপিবি বাসদ থেকে শুরু করে বিএনপি জামায়াত, কথিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব রসুনের গোড়া এক জায়গায়। সবই এন্টি আওয়ামী লীগ! একই কারনে জামায়াতের সঙ্গে অনেক বামপন্থী তখন মুক্তিযুদ্ধেরও বিরোধিতা করেছে! দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় তারা এখানে আটকা পড়ে। পাকিস্তান বিহারীদের মতো তাদেরকেও ফেরত নেয়নি। বাংলাদেশে তাদের এখন অনেক বংশধর।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার গড়া মিডিয়া পাড়াও কতটা এন্টি আওয়ামী লীগ এর একটি উলঙ্গ প্রকাশ এবার ঘটেছে। শতশত মডেল মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন বেঈমানি করবেন, এটা শেখ হাসিনাও জানতেন। মিডিয়ার লোকজন যে এভাবে অতিদ্রুত রং পাল্টাবে তা হয়তো জানতেন না।
আগষ্ট মাসটা এন্টি আওয়ামী লীগ ধারার রাজনীতির জন্য পয়মন্ত এক মাস! ১৪ আগষ্ট তাদের পেয়ারা পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে। ১৫ আগষ্ট তারা বাংলাদেশের জাতির পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে পথ হারিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদ হয়ে যায়! ওই সময়ে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকায় তারা তাদের খুন করতে পারেনি। সেই চেষ্টাটিও ব্যর্থ হয় ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট। আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। হতাহত হন আইভি রহমান সহ শতশত নেতাকর্মী।
অত:পর এন্টি আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জিন্দাবাদ আবার সফল হয়েছে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গনভবন থেকে উৎখাত করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ভারতে। যাও তুমি তোমাদের ভারতে গিয়ে থাকো। আমাদের পাকিস্তান জিন্দাবাদের দেশে তোমার স্থান নেই। এরপর তারা কোন ধরনের রাষ্ট্রদরোহ মামলা ছাড়িয়েই জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তুলেছে! দীর্ঘ ৫৩ বছর পর সুখে শান্তিতে পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মদিন পালন করা হয়েছে ঢাকায়! এন্টি আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট জ্ঞানপাপীরা এসবকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলেছেন!
৫ আগষ্ট গণভবন লুটপাট, ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার বাড়ি আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়া, সারাদেশে জাতির পিতা বংগবন্ধুর ভাস্কর্য ধংসের মাধ্যমে নজিরবিহীন সন্ত্রাস, মানুষ খুনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারীরা তাদের জাত প্রকাশ করে। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এন্টি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ধারার ঘাড়ে বন্দুক রেখে পনের আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিলের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক মুখোশ ছুড়ে ফেলে দেন। এদের কথিত সংস্কার কর্মসূচির মূল মন্ত্র হলো আওয়ামী লীগকে সমূলে উৎখাত করা! পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এই চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তারা তখন একুশ বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে সমর্থ হয়।
মাঠের রাজনীতির সাফল্যে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে ১৯৯৬ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে। শেখ হাসিনা তখন অনেক ভালোমানুষি দেখাতে গিয়ে উচিত শিক্ষা পান! বাংলাদেশে প্রথম নিয়মতান্ত্রিক ভাবে তিনি বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এসেছিলেন। কিন্তু সে রাতেই দেশের মানুষকে বার্তা দেয়া হয় লতিফুর রহমানের তত্বাবধায়ক সরকার একটি এন্টি আওয়ামী লীগ সরকার। এই দলের মূল এসাইনমেন্ট হলো আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় ফিরতে না দেয়া!
লতিফুর রহমানের এন্টি আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনের দিন আমি মুন্সিগঞ্জ শহরে রিপোর্ট করতে গিয়ে ছিলাম। অবাক হয়ে দেখি সারা শহরে সব বাহিনী মিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী খুঁজছে! কোন ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টও থাকতে দেয়া হয়নি! যে সব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বেশি ভোট পাওয়া সম্ভব ছিল সে সব কেন্দ্রের ব্যালট বাক্সের সলিল সমাধি ঘটানো হয়! বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসে মানে সবাই মিলে বলা শুরু করেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে! এন্টি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ধারার নির্বাচন সুষ্ঠু হবার মানদন্ড হলো আওয়ামী লীগকে পরাজিত হওয়া! এরপর দেশে বিএনপির সুশাসনের(!) কারনে ১/১১ এর সরকার আসে!
চলতি এন্টি আওয়ামী লীগ ইউনুস সরকার দেশের প্রধান সব এন্টি আওয়ামী লীগ এনজিওদেরও সরকার। এদের সবার মক্কা আবার ওয়াশিংটনে। এরা আমেরিকার টাকায় চলেন। আমেরিকার সঙ্গে নিমকহারামী করেননা। দেশের এন্টি আওয়ামী লীগ ধারার রাজনীতি পাকা পোক্ত করতে ছয়খানা সংস্কার কমিটি করেছেন ইউনুস। এই ছয় প্রধান সবাই মার্কিন এনজিওজীবী! তারাই এখন দেশের মালিক! ভাবখানা তারা যা বলবেন সেটিই কোরান হবে! সেটিই মানতে হবে সবাইকে!
এদের একজন বদিউল আলম মজুমদার! তার এখনকার এনজিওর নাম সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক! আগের এনজিও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট কে লুটেপাট করে খেয়েছে আমরা তা কাউকে বলবোনা। গত পনের ষোল বছর ধরে এই বদিউল আলম মজুমদার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অনেক কষ্ট করে আসছিলেন। সব সময় বলতেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহন ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক হয়না। মার্কিন এনজিও ব্যক্তিত্ব এন্টি আওয়ামী লীগ বদিউল আলম মজুমদারকে নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের দায়িত্ব দিয়েছে এন্টি আওয়ামী লীগ ইউনুস সরকার! দায়িত্ব পেয়েই তার বক্তব্য ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে! এখন তার ফতোয়া হলো আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবেনা!
মর্নিং শোজ দ্য ডে মানে এন্টি আওয়ামী লীগার বদিউল আলম মজুমদারের বক্তব্যেই বোঝা গেল কী নির্বাচন তারা করতে চান! আওয়ামী লীগকে তারা নির্বাচন করতে দেবেননা! ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে এই বয়সে তারা কোথায় যাবেন! দৌড়ের দম সামর্থও যে এখন তাদের নেই! এই সিদ্ধান্ত অবশ্য এন্টি আওয়ামী লীগার বদিউল আলম মজুমদারের একার না। এর আগে এন্টি আওয়ামী লীগার ইউনুস সরকারও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে! আগে তারা আওয়ামী লীগের বিচার করবেন! এরপর নাকি জনগন সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগকে তারা রাজনীতি করতে দেবে কীনা! তারাই এখন এমন নিজেদের দেশের সবকিছুর মনিব মা-বাপ ভাবছেন!
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যখন সব ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়া হলো, তখন এন্টি আওয়ামী লীগার ইউনুস ভারতীয় মিডিয়াকে বললেন, এটি শেখ হাসিনার কর্মফল! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এখনও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের জাতির পিতা। এই বিষয়টি ইউনুস সরকার বাতিল করেনি বা বাতিল করতে গেলে তাদের হাত পুড়বে। কিন্তু যারা বংগবন্ধুর ভাস্কর্য ভেংগেছে তাদের সবার ছবি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা কী নেয়া হয়েছে? না এসব তাঁদেরও মনের বাসনা? টের পাবেন ইউনুস সাহেব। এই দিনই শেষ দিন না!
এরা একটা কথা এখন প্রতিদিন বলে বেড়ায় তাহলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সবাই পালিয়ে গেছে! তাদের কাউকে তারা খুঁজে পাচ্ছেননা! পচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি মোশতাক সরকারে যারা যোগ দিয়েছেন তারা বাদে যেখানে যাকে পাওয়া গেছে তাদেরকেই গ্রেফতার করা হয়েছে! এবারকার এন্টি আওয়ামী লীগ ইউনুস সরকার একটি অরাজক সরকার।
এদের আমলে সারাদেশে আওয়ামী লীগের অফিস, নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে! আওয়ামী লীগের নাম নিশানা মুছে দেবার আশায় এ দলের সবার বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে খুনের মামলা! আদালতের ভিতরে বাইরে আটক ব্যক্তিদের মারধর করা হচ্ছে! সাবেক খাদ্যমন্ত্রী বৃদ্ধ রমেশ চন্দ্র সেনের ওপরেও আদালতে হামলা চালানো হয়েছে! বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অরাজক বর্বর সরকার দ্বিতীয়টি আসেনি। আর সারাক্ষন তসবি জপছেন আর বলছেন আওয়ামী লীগের সবাই পালিয়ে গেছে! বিচার কে কার করবে?
ইউনুস সরকারের এসব অরাজকতার বিচার হবেনা মনে করা হচ্ছে? জিয়া এরশাদের মতো এরা এখন ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের কসরত করছে। ১/১১ এর সময়ও এন্টি আওয়ামী লীগার ইউনুসের রাজনৈতিক দল গঠনের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরনো সংগঠন। ক্ষমতায় বসে এ দলের জন্ম হয়নি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এ দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষমতার বাইরে আসায় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দলটির নতুন পুনর্জন্মের। টের পাবেন এন্টি আওয়ামী লীগ ইউনুস সরকার।
বাংলাদেশের জন্মের নেতৃত্ব দেয়া প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে প্রো পাকিস্তানি ইউনুস সরকারের নির্বাচন করার স্বপ্ন পূরন হবেনা। বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে তারা গ্রহন করে দেখতে পারেন। এই সরকারে দুই শিশু উপদেষ্টা থাকলেও বাকিদের প্রায় সবাই বৃদ্ধ। বদিউল আলম মজুমদার সহ যারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখার দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁদেরও দৌড়ের সামর্থ নেই। দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য দেশের ভিতরের নেতাকর্মীর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। প্রতিদিন আরও যাচ্ছেন। আবার যুদ্ধ হবে।
কাছাকাছি পাকিস্তান সীমান্ত না থাকায় এই সুযোগটি এন্টি আওয়ামী লীগার ইউনুস সরকারের নেই। এরমাঝে অস্ট্রেলিয়ার সিনেটে বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে আলোচনা হয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে এটা চলবে। কারন সারা পৃথিবী জুড়েই এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠিত। সোশ্যাল মিডিয়াও এখন শক্তিশালী একটি ফ্রন্ট। চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেখতে পারেন এন্টি আওয়ামী লীগার ইউনুস সরকার। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করতে পারেন কীনা। প্লিজ। আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়াতে আপনাদের এমন একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ বড় দরকার।
Whatsup: +413 871 137
Fazlul Bari
ফজলুল বারী ভাইয়ের লেখা।